শেখ সাহেবকে আমরা প্রশ্ন করি, ” বাংলাদেশের আইডিয়াটা প্রথম কবে আপনার মাথায় এল?”
“শুনবেন?” তিনি মুচকি হাসলেন।

“সেই ১৯৪৭ সালে। তখন আমি সোহরাওয়ার্দী সাহেবের দলে। তিনি ও শরতচন্দ্র বসু চান যুক্তবঙ্গ। আমিও চাই সব বাঙ্গালীর এক দেশ। বাঙ্গালীরা এক হলে কী না করতে পারতো। তারা জগত জয় করতে পারতো। They could conquer the world”


বলতে বলতে তিনি উদ্দীপ্ত হয়ে উঠেন। তারপর তিনি বিমর্ষ হয়ে বলেন, “দিল্লী থেকে খালি হাতে ফিরে এলেন সোহরাওয়ার্দী আর শরত বোস। কংগ্রেস বা মুসলিম লীগ কেউ রাজী নয় তাদের প্রস্তাবে। তারা হাল ছেড়ে দেন। আমিও দেখি আর কোন উপায় নেই। ঢাকায় চলে এসে নতুন করে আরম্ভ করি। তখনকার মতো পাকিস্তান মেনে নেই, কিন্তু আমার স্বপ্ন সোনার বাংলা। সে স্বপ্ন কেমন করে পুর্ন হবে এই আমার চিন্তা। হবার কোন সম্ভাবনাও ছিলো না। লোকগুলা যা কমিউনাল ! হঠাত একদিন রব উঠলো, আমরা চাই বাংলা ভাষা। আমিও ভিড়ে যাই ভাষা আন্দোলনে। ভাষাভিত্তিক আন্দোলনকেই একটু একটু করে রুপ দেই দেশভিত্তিক আন্দোলনে। পরে এমন একদিন আসে, যেদিন আমি আমার দলের লোকদের জিজ্ঞেস করি, আমাদের দেশের নাম কি হবে? কেউ বলে পাক বাংলা, কেউ বলে পুর্ব বাংলা। আমি বলি না, বাংলাদেশ। তারপর আমি শ্লোগান দেই, জয় বাংলা। তখন ওরা বিদ্রুপ করে, জয় বাংলা না জয় মা কালী ! কী অপমান ! সে অপমান আমি সেইদিন হজম করি। আসলে ওরা আমাকে বুঝতে পারেনি। জয় বাংলা বলতে আমি বোঝাতে চেয়েছিলাম বাংলা ভাষা, বাংলাদেশ ও বাঙ্গালী জাতির জয়। যা সাম্প্রদায়িকতার উর্ধ্বে।


‘জয় বাংলা’ আসলে একটি মন্ত্র। যেমন বংকিমচন্দ্রের ‘বন্দে মাতরম’ বা, দাদাভাই নওরোজীর ‘স্বরাজ’ বা, গান্ধীজির ‘কুইট ইন্ডিয়া’ বা, নেতাজি সুভাষের ‘দিল্লী চলো’।
এ হলো শব্দ ব্রহ্ম। একটি শব্দের বা শব্দের সমষ্টির মধ্যে অসীম শক্তি নিহিত। সে শক্তি অসাধ্যসাধনপটিয়সী।
-ইন্দ্রপাত, অন্নদাশংকর রায়।
গ্রন্থঃ বঙ্গবন্ধু,

সম্পাদনায়ঃ অভিনয় কুমার দাশ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে