ভারত বর্ষে উচ্চশিক্ষার শুরু ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের পরপরই। ১৮৫৭ সালের পর ভারতের বড় লাট লর্ড ক্যানিং ‘দ্যা অ্যাক্ট অফ ইনকরপোরেশন’ পাস করে কোলকতা, বোম্বে ও মাদ্রাজে ৩টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এর আগেও ভারত বর্ষে উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা ছিল কিন্তু। এ ৩ টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয় পুরো ইউরোপীয় মডেলে । ১৯০৫ সালে বঙ্গবঙ্গের আগে অবিভক্ত বাংলায় ১৯ টি কলেজ ছিল। যার ৯টি ছিল পূর্ব বাংলায়।
বঙ্গভঙ্গ রদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১৯১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের ভাইরস লর্ড হার্ডিঞ্জ। এরপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, ভূ- আঞ্চলিক ষড়যন্ত্রসহ নানা প্রতিকূলতা পেছনে ফেলে ১৯২১ সালের ১ জুলাই এই ভূখণ্ডে যাত্রা শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এপার বাংলার জাতিসত্তা, অস্তিত্ব জড়িয়ে আছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটিতে। ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলন,৬৬’র ৬দফা, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস রচিত হয় এখানে। অবশ্য, দীর্ঘ এই ৫০ বছরে পূর্ব বাংলায় প্রতিষ্ঠিত হয় আরো পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়। দেশ মাতৃকার চরম দুঃসময়ে এই জাতিকে নেতৃত্ব দিয়ে আলোর পথ দেখিয়েছেন এসব বিশ্ববিদ্যায়েলর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত, ৩ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি এবং ৯ মাসের সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক একটি নতুন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। কিন্ত দেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ব্যাপক সহিংসতায় এ ভূখণ্ডের রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, হাট-বাজার, ঘর-বাড়ি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়।
সদ্য স্বাধীন হওয়া একটি রাষ্ট্রের ভেঙ্গে পড়া শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেন স্বাধীনতার স্থাপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেশের ৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশ-১০ ধারা অনুযায়ী তিনি ‘বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন ( ইউজিসি)’ প্রতিষ্ঠা করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর গুরুদায়িত্ব অর্পন করেন তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথিতযশা শিক্ষক বিশিষ্ট রাষ্ট্রচিন্তাবিদ, সমাজ ও অর্থনৈতিক সংস্কারক প্রফেসর ড. মোজাফফর আহমেদ চৌধুরীকে । প্রফেসর ড. মোজাফফর আহমেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব প্রদানের পরই মহামান্য রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এ সময়ে শিক্ষামন্ত্রী পতে নিয়োগ প্রদান করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক এম ইউসুফ আলীকে এবং শিক্ষা সচিব পদে নিয়োগ প্রদান করেন আরেক শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. এ আর মল্লিককে। দীর্ঘদিন এভাবে চলার পর শিক্ষা মন্ত্রানলয় দুটি বিভাগে বিভক্ত হয়। একটি হলো- মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, অন্যটি হলো-মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগ।
এই সুদীর্ঘ পথ পরিক্রমায় বর্তমানে দেশে ৫০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় মধ্যে ৪৬টিতে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। প্রত্যেকটি বিশ্বদ্যালয়ের রয়েছে আলাদা আলাদা আইন। সারাদেশে লাখ লাখ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করলেও সে নিজে জানে না কীভাবে চলছে, কোন আইনে এগোচ্ছে তার বিদ্যাপীঠ। আজকের এই লেখাটি মূলত তাদের জন্যই । কারণ, বাংলাদেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অন্যতম পার্থক্য হলো আইন সংক্রান্ত। অর্থ্যৎ একটি মাত্র আইন দ্বারা দেশের সমস্ত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয়।
পক্ষান্তরে, প্রত্যেকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয় নিজস্ব আইন দ্বারা। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে দুই ধরনের পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। এর একটি হলো- স্বায়ত্তশাসিত, অন্যটি হলো-সংবিধিবদ্ধ। যে সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৩ সালের আইন দ্বারা পরিচালিত বা পুনর্গঠিত এবং যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট আছে সে সকল বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত। এর বাইরে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ সংবিধিবদ্ধ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। গঠন, প্রতিষ্ঠা, ধরন এবং বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ ছয়ভাগে বিবক্ত।
বৈশিষ্ট্য ও ধরন অনুযায়ী এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয় : জেনারেল বা সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯২১), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৫৩), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৬৬), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৭০), ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৮০), খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৯০), জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৯২), বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৯২), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (২০০৫), কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (২০০৬), জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় (২০০৬), বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়
(২০০৯), বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (২০১১), রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় (২০১১), শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়
(২০১৮), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় (২০২০)।
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ : বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৬১), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৯৮), শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (২০০১), চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (২০০৬), সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (২০০৬), খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৮), হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (২০২০)।
প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৬১), চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (২০০৩), রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (২০০৩), খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (২০০৩), ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (২০০৩), বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (২০১০)।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৮৭), হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (২০০১), মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (২০০১), পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (২০০১), নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (২০০৪), যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (২০০৭), পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (২০০৮), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (২০০১, শিক্ষকার্যক্রম ২০১০), রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (২০০১, শিক্ষকার্যক্রম ২০১৩), বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৮), চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (২০২০)।
মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৯৮), চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৭), রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৭), সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৮), শেখ হাসিনা মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (২০১১)।
বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ: বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি )( ২০০৯), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৩), ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৩), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি (২০১৮), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটি (২০১৮)।
উচ্চশিক্ষার বিস্তার সম্প্রসারণ, মানদন্ড, আইন, তদারকির জন্য সরকার একটি নিদিষ্ট যোগসূত্র নিরুপন করেছে। বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্জুরী কমিশন একই সুতোয় গাঁথা। সরকারের এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা বা বিভাগ দেশের উচ্চশিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
এর মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ দেশের পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের চ্যান্সেলর তথা মহামান্য রাষ্ট্রপতির সচিবালয় হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকে। কারণ বাংলাদেশের পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্বাবদ্যালয়সমূহের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতিই চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাড়া অন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক এবং একাডেমিক দায়িত্ব পালন করে থাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা বিভাগ। মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শুধু একাডেমিক বিষয়সমূহ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ দেখ ভাল করে। অপরদিকে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন তথা হাসপাতাল পরিচালনার অংশটি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় দেখ ভাল করে থাকে।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি তথা চ্যান্সেলরের সচিবালয় হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণলয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ দেশের পাবলিক, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষ নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকে। শিক্ষা মন্ত্রণলয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ উল্লিখিত তিনটি পদের প্যানেল তৈরি করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশক্রমে মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর অফিস আদেশ জারি করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ধারা অনুযায়ী সিনেট, সিন্ডিকেট তথা রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য নিয়োগের বিষয়টিও শিক্ষা মন্ত্রণলয় প্রত্যক্ষভাবে সম্পন্ন করে থাকে।
বিশ্বাবদ্যালয়ের প্রত্যেকটি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের বিশেষজ্ঞ সদস্য ( মন্ত্রণালয় তথা চ্যান্সেলর নমিনি) মনোনয়নসংক্রান্ত যাবতীয় প্রক্রিয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পন্ন করে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের অর্গানোগ্রামের চূরান্ত অনুমোদন দেয় শিক্ষা মন্ত্রণলয় ।
বিশ্ববিদ্যালয় বিধি, প্রবিধি এবং সংবিধি মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ অনুমোদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকে ।
কেনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য কিংবা কোষাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অভিযোগ উত্থাপিত হলে সরাসরি শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিজস্ব জনবল দিয়ে কিংবা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মন্জুরী কমিশনের মাধ্যমে তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয় মন্জুরী কমিশনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক : পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মন্জুরী কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় মন্জুরী কমিশন এবং দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ এতই অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত যে, একে ছাড়া অন্যে অচল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ বার্ষিক বাজেট সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে প্রেরণ করে তা অনুমোদন করিয়ে স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রদান করে থাকে। শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নতুন পদ সৃষ্টি করে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দের ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। নতুন বিভাগ , ইনস্টিটিউট ও সেন্টার খেয়াল অনুমোদন প্রদান করে থাকে ইউজিসি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠোমো, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা ও আসবাবপত্র ক্রয়ের নিমিত্তে দেশি ও বিদেশি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে অর্থের সংস্থান করতে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করে থাকে। ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এ নিবিড় সম্পর্ক মূলত শিক্ষার সম্প্রসারণে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।
সম্মানিত শিক্ষকগণের গবেষণাধর্মী পুস্তক এবং গবেষণামূলক জার্নাল প্রকাশের জন্য “ইউজিসি স্বর্ণপদক” এবং মেধাবী শিক্ষার্থীদের মেধার স্বীকৃতিস্বরূপ ‘ প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক ‘ প্রদানের ব্যবস্থা করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি, প্রবিধি, সংবিধি এবং অর্গানোগ্রাম প্রণয়নে প্রত্যেক্ষভাবে সহায়তা প্রদান করে থাকে। কোনো উপাচার্য, উপ-উপাচার্য কিংবা কোষাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপিত হলে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, নিরপেক্ষ তদন্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন সরকারের কাছে উপস্থাপন করে থাকে ইউজিসি।
দেশের প্রত্যেকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ই-লাইব্রেরির সুবিধা প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে অভ্যন্তরীণ কিংবা আন্তর্জাতিক সেমিনার-সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান এবং আর্থিক সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে।
বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনারে অংশগ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণকে উৎসাহ প্রদানের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করে থাকে। শিক্ষা মন্ত্রণলয়, বিশ্ববিদ্যালয় মন্জুরী কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ এ কার্যক্রম বিস্তর এক কর্মযজ্ঞ। কারণ, তিনটি ভিন্ন এই প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি যদি স্থবির হয় তবে এর প্রভাব উচ্চশিক্ষা পরিবারের প্রতিটি সদস্য এমনকি শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়ে।
লেখক : ড. ফেরদৌস জামান : সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বিশ্ববিদ্যালয় মন্জুরি কমিশন। কৃতজ্ঞতা : কলম।