তথ্যপ্রযুক্তির যুগে অনেক বিশেষজ্ঞ বুদ্ধিজীবীমহলের মন্তব্য এই যে, `শিশুদের স্মার্টফোন ব্যবহার করা ঠিক নয়। স্মার্টফোন তাদের বুদ্ধিভিত্তিক সক্ষমতা নষ্ট করে দিচ্ছে।‘ কিন্তু শিশুদের মধ্যে দিনদিন স্মার্টফোন ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েই চলছে। ইউএস ভিত্তিক সংস্থা অফকম-এর মতে বিশ্বব্যাপী ৯ বছর বয়সী  ৪৪% শিশু , ১১ বছর বয়সী ৯১% শিশু, সাধারণত ৯-১১ বছর বয়সী ৩৭% শিশু স্মার্টফোন ব্যবহার করে। বাংলাদেশের মধ্যে ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ ৬২% এবং সিলেট বিভাগে সর্বনিম্ন ৪৮% শিশু স্মার্টফোন ব্যবহার করে। অনেকেই বলছেন, `স্মার্টফোন শিশুদের মধ্যে বন্ধুদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ, আড্ডা বা হাসিখুশি থাকার প্রবণতা কমিয়ে দিচ্ছে। তাদেরকে এ জন্য প্রায়শই বিষণ্ণ থাকতে দেখা যায়।‘

ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার অধ্যাপক ক্যান্ডিফ ওজার্সের মতে `স্মার্টফোন ব্যবহারের সাথে শিশুদের ভালো না থাকার কোনো সম্পর্ক নেই। বেশিরভাগ সময় দেখা যায় বাচ্চারা ফোন ব্যবহার করে তার পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করে। অনলাইন-অফলাইন কোনো মাধ্যমে তারতম্য দেখা যায় না। অনলাইনের মাধ্যমে তারা আরো বেশি কানেক্টেড থাকছে।‘

ইউনিভার্সিটি অফ ক্যামব্রিজের অধ্যাপক এমি ওরবেনের মতে, `প্রযুক্তির সাথে ভালো থাকার সম্পর্ক অসম্ভব।‘ আর একটা অভিযোগ আছে- ‘স্মার্টফোনের কারণে বাচ্চারা বাইরে যাচ্ছে না।’

এক গবেষণায় দেখা গেছে- স্মার্টফোন থাকলে বাচ্চাদের বাইরে যাওয়ার স্বাধীনতা বেড়ে যায়। কারণ তারা সহজেই একে অপরের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারে। আর অপরিচিত জায়গায় তাদের জায়গা চিনতে স্মার্টফোন টুলসগুলো কাজে লাগে।

স্মার্টফোন ব্যবহারের সাথে Life Satisfaction (জীবন নিয়ে আত্মতুষ্টি) বিষয়টা জড়িয়ে আছে। ১৯-২১ বছর বয়সী ১৭০০০ লোকের এক জরিপে তথ্য যাচাই করা হয়। যাতে দেখা যায়- মেয়েদের ক্ষেত্রে ১১-১৩ বছর বয়সে এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে ১৪-১৫ বছর বয়সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করা তাদের পরবর্তী জীবনের ” জীবন নিয়ে আত্মতুষ্টি” (Life Satisfaction) কমিয়ে দেয়। আবার উল্টোটাও প্রমাণিত হয়েছে। কাজেই সন্তানকে স্মার্টফোন দেওয়ার ক্ষেত্রে বুঝতে হবে এটা পরিবারের সাথে কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ।

ইউনিভার্সিটি অফ ভিয়েনা’র আনজাস স্টেবিকের মতে,  মা-বাবাকে বুঝতে হবে যে তার সন্তান ডিভাইস রাখার মতো যথেষ্ট দায়িত্বশীল কিনা ? বাবা-মা সন্তানের স্মার্টফোন ব্যবহার নিয়ে কতটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। সন্তানের সাথে তাদের স্মার্টফোন নিয়ে যখন দ্বন্দ্ব হয়, তখন সন্তানকে নিয়ে তার স্মার্টফোনসহ বসতে হবে। তার মোবাইলে কি আছে সেটা নিজ হাতে দেখে নিবেন। তাকে সেনসিটিভ কন্টেন্ট দেখাশোনার ব্যাপারে ব্যাপারে সীমাবদ্ধতা আরোপ করবেন। তাছাড়া সন্তানের সামনে নিজেদের স্মার্টফোন ব্যবহারে সচেতন হন। সন্তানের ফোন চালাতে যেখানে আপনি সীমাবদ্ধতা আরোপ করছেন। সেখানে সন্তানের সামনে বসে মোবাইল চালাবেন না। যথাসম্ভব মোবাইল চালানো এড়িয়ে চলুন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে