আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সতর্কবার্তা সত্যি প্রমাণ করে পৃথিবীতে দেখা গেলো সৌরঝড়ের ধাক্কা। এই ঝড়ের ফলে পৃথিবীর একাধিক দেশের আকাশে দেখা গেছে অভিনব মেরুজ্যোতি। সৌরঝড়ের ফলে সূর্যের মধ্যেকার আগুনে পদার্থ ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায় চারদিকে। মহাকাশে সৌরজগতের অন্যত্রও সেই পদার্থের বিচ্ছুরণ ঘটে। প্রভাব পড়ে সূর্যের বিভিন্ন গ্রহ ও উপগ্রহের পারিপার্শ্বিকে। পৃথিবীর উপরেও সম্প্রতি সৌরঝড়ের প্রভাব পড়ে। সূর্যের ঝড়ের ফলে বিচ্ছুরিত সৌরপদার্থের ধাক্কা এসে লাগে পৃথিবীর চৌম্বকীয় তরঙ্গে।

আমেরিকার ন্যাশনাল ওসানিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা নোয়ার তরফে জানানো হয়, সৌরঝড়ের ধাক্কায় পৃথিবীর চৌম্বকীয় তরঙ্গে ঝড় উঠে। গত ২৩ এপ্রিল রাত থেকে এই ভূ-চৌম্বকীয় তুফান শুরু হয়। যা চলে ২৪ এপ্রিল সারা দিন। এই ঝড়ের ফলে পৃথিবীর বুকে একাধিক দেশের আকাশে দেখা গেছে অভিনব মেরুজ্যোতি। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ২৩ এপ্রিল রাতে আকাশে মেরুজ্যোতি লক্ষ্য করা গেছে। দক্ষিণ ইউরোপ, এমনকি ফ্রান্স পর্যন্ত এই মেরুজ্যোতির ঝলক দেখা যায়।

চিনের আকাশে উজ্জ্বল লাল রঙের মেরুপ্রভা দেখেছেন অনেকে। বার্লিনে রাতের আকাশে দেখা যায় গাঢ় সবুজ রঙের আলো। একই দৃশ্যের সাক্ষী পোল্যান্ডও। সৌরঝড়ে সূর্যের কেন্দ্র থেকে প্লাজমা এবং চৌম্বকীয় তরঙ্গের বিরাট বিস্ফোরণ সংঘটিত হয়। এর ফলে কোটি কোটি সৌরপদার্থের কণা চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যায়। এই বিস্ফারিত সৌরপদার্থের কণাগুলি মহাকাশে ঘণ্টায় ৩০ লাখ কিলোমিটার বেগে পরিবাহিত হতে পারে। সেগুলো যদি পৃথিবীতে নেমে আসে, তাহলে বিপদের সম্ভাবনা থাকবে। সেই আশঙ্কাতেই সতর্কতা জারি করেছিল নাসা।

নাসার বিজ্ঞানীদের মতে, সৌরঝড়ের ফলে পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্রে ফাটল ধরতে পারে। যার প্রভাবে জিপিএস, বেতার যোগাযোগ সাময়িক ভাবে বিচ্ছিন্ন হতে পারে। ঝড়ের মাত্রা অনুযায়ী এই প্রভাব দীর্ঘস্থায়ীও হতে পারে। বিজ্ঞানীরা জানান, এই ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়ের প্রভাব পড়তে পারে পৃথিবীর ইন্টারনেট সংযোগেও। মোবাইল নেটওয়ার্কও এর ফলে দুর্বল হতে পারে। কোথাও কোথাও সাময়িকভাবে নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হতে পারে। ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়ের প্রভাব জোরালো হলে পৃথিবীতে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে বলে জানান বিশেষজ্ঞেরা। সাম্প্রতিক সৌরঝড়কে ঝড়ের ঝাঁজ অনুযায়ী একে জি৪ শ্রেণির বলা হয়। বিশেষজ্ঞেরা জানান, জি৪ শ্রেণির ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়ের ফলে বিশ্বব্যাপী বিদ্যুতের ভোল্টেজ নিয়ন্ত্রণ সমস্যার মুখে পড়তে পারে। ক্ষতি হতে পারে বেশ কিছু নিরাপত্তামূলক প্রযুক্তির পরিচালনাতেও। এ ছাড়াও, সূর্য থেকে ছড়িয়ে পড়া আয়নিত কণাগুলি পৃথিবীর তরঙ্গে ধাক্কা দিলে বৈদ্যুতিক স্রোত তৈরি হবে। এতে বিভিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের লাইনে সেই স্রোত গিয়ে ব্ল্যাকআউটের পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। এর ফলে বিভিন্ন কৃত্রিম উপগ্রহের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে। যদিও সৌরঝড়ের ফলে পৃথিবীর কোনো দেশে এখন পর্যন্ত এরকম দুর্ঘটনার কথা জানা যায়নি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে