বাংলাদেশ জাতীয় যোগ্যতা কাঠামো বা বাংলাদেশ ন্যাশনাল কোয়ালিফিকেশনস ফ্রেমওয়ার্ক ( বিএনকিউএফ)-এর যাত্রা গত ১২ মার্চ শুরু হলো এক বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে এই বহুল প্রতীক্ষিত অনুষ্ঠানটি যৌথ ভাবে আয়োজন করেছে কারিগরী ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ ( টিএমইডি), বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)। এ উপলক্ষে বিএনকিউএফ-এর ভবিষ্যত সম্ভাবনা ও কর্মপরিকল্পনার বিষয়ে একটি আলোচনা আয়োজন করা হয়৷

বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রী ড. দীপুমনি এমপি এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে  উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি হিসেবে  উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এমপি ও বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অ্যামবাসেডর ও ডেলিগেশন-প্রধান এই.ই চার্লস হুইটলি।

বিএনকিউএফ-এর মূল স্টেকহোল্ডারদের অবদানের প্রশংসা করে, শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপুমনি এমপি বলেন, ‘‘আজকের আয়োজনের মাধ্যমে বিএনকিউএফ-এর যাত্রা শুরু হলো। আমি নিশ্চিত করেই বলতে পারি বিএনকিউএফ-এর কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে অগ্রসর হবে। বিভিন্ন শিক্ষা ও প্রশিক্ষণখাতে পূর্ণ অভিযোজন নিশ্চিত করতে এবং সময়োপযোগী এবং কার্যকর পদ্ধতিতে এগুলোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষাবিদ, নিয়োগকর্তা এবং শিক্ষার্থীসহ সকল স্টেকহোল্ডাররা একসাথে কাজ করবেন।” তিনি আরও বলেন, “বিএনকিউএফ-এর মতো আন্তর্জাতিক ও জাতীয়ভাবে স্বীকৃত যোগ্যতা কাঠামোর বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় গুণগত মান-ব্যবস্থা নির্ধারণ, শিক্ষাক্রম পরিমার্জন ও আইনগত স্বীকৃতির মাধ্যমে এটি পর্যায়ক্রমে কার্যকর করার, সহায়ক উপকরণগুলির সংযুক্ত করা হবে ।

বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অ্যামবাসেডর ও ডেলিগেশন-প্রধান এই.ই চার্লস হুইটলি তাঁর মন্তব্যে জানান, ‘‘আমরা আশা করি বিএনকিউএফ ন্যাশনাল স্টিয়ারিং কমিটি আজকে থেকেই বিএনকিউএফ-এর পূর্ণ বাস্তবায়ন ও দীর্ঘমেয়াদী স্থায়িত্বের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’’ বাংলাদেশের নিযুক্ত আইএলও কান্ট্রি ডিরেক্টর টুওমো পৌতিআইনেন বলেন, “বিএনকিউএফ মাত্র একটি শিক্ষা কাঠামো নয়, এটি তরুণদের ক্ষমতায়ন, কর্মসংস্থান এবং উৎপাদনশীল ও আধুনিক দক্ষতার সুযোগগুলির সাথে তাদের পরিচয় ঘটিয়ে দেয়ার একটি সত্যিকার মডেল”।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে আইএলও আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক দক্ষতা সামিটে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই প্রথম এই জাতীয় পর্যায়ে সমন্বিত  দক্ষতা যোগ্যতা কাঠামো প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। কারিগরী ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ( টিএমইডি), বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক অনুদানে পরিচালিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার স্কিলস টোয়েন্টি ওয়ান প্রকল্পের কারিগরি সহায়তায় বাংলাদেশ জাতীয় দক্ষতা যোগ্যতা কাঠামো ( বিএনকিউএফ) গড়ে তুলেছে।

বাংলাদেশ জাতীয় দক্ষতা যোগ্যতা কাঠামো আসলে একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কাঠামো যেখানে জ্ঞান, দক্ষতা ও সক্ষমতার উন্নয়ন, শ্রেণিবিন্যাস ও স্বীকৃতিকে সর্বসম্মতভাবে কয়েকটি আপেক্ষিক স্তরে সমন্বয় করা হয়েছে। এ কাঠামোর ১০টি স্তরে উচ্চশিক্ষা, সাধারণ, কারিগরি, মাদ্রাসা শিক্ষার কার্যকর সমন্বয় ও আন্তঃসংযোগের ব্যবস্থাও থাকছে। ফলে কেউ চাইলে একটি শিক্ষা-ব্যবস্থা থেকে আরেকটিতে অর্জন অক্ষুন্ন রেখেই স্থানান্তরিত হতে পারবে। বিএনকিউএফ- এ এই কাঠামো, জীবনব্যাপী শিক্ষা, মড্যুলার বা ইউনিটাইজড সিস্টেম, গুণগত মান ব্যবস্থা আর সেইসঙ্গে পূর্ব অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার স্বীকৃতি এবং যোগ্যতা কাঠামো অনুযায়ী একটি শিক্ষা ব্যবস্থা হতে অন্য ব্যবস্থায় যাওয়ার জন্য পরিষ্কার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয় দক্ষতা যোগ্যতা কাঠামো ( বিএনকিউএফ) দেশের জনগণকে সহজে বিভিন্ন ধারার শিক্ষাক্ষেত্র ও চাকরির বাজারে নিজের অবস্থান তৈরি করতে সাহায্য করবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে