দেশের অনলাইন ও অফলাইন ভিত্তিক উদ্যোক্তাদের মর্যাদাপূর্ণ সংগঠন ‘অন্ট্রাপ্রেনিয়ার্স ক্লাব অব বাংলাদেশের’ (ই-ক্লাব) নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন ইন্টেরিয়র স্টুডিও’র প্রধান নির্বাহী (সিইও) লিয়াকত আলী চাকলাদার (মারুফ লিয়াকত) ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন ই-কুরিয়ারের প্রধান নির্বাহী (সিইও) বিপ্লব ঘোষ রাহুল।

গত ২২ ডিসেম্বর রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ১৩ সদস্যবিশিষ্ট নতুন এই কমিটি ঘোষণা করা হয়। বিদায়ী কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শাহরিয়ার খান ও সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান নবনির্বাচিত কমিটির কাছে আগামি দুই বছরের জন্য দায়িত্বভার তুলে দেন।

নবনির্বাচিত কমিটির সিনিয়র সহ সভাপতি হয়েছেন শাহ আলম চৌধুরী, সহ সভাপতি ইমতিয়াজ উদ্দীন, প্রকৌশলী মো. সজিবুল আল রাজিব, যুগ্ম সম্পাদক আরেফিন দীপু, সাংগঠনিক সম্পাদক ফাহমিদা আহমেদ, পিআর সম্পাদক রাবেয়া খাতুন লাকী ও সদস্য সচিব চয়ন সাহা। নির্বাচিত চার পরিচালক হলেন সোলায়মান আহমেদ জিসান, লিজা আক্তার হোসেন, প্রমি নাহিদ ও মো. মাইনুল হাসান দোলন।

কমিটি গঠনের এই অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী জনাব আ ক ম মোজাম্মেল হক, এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবুবক্কর সিদ্দিক ও প্রথম আলোর হেড অব ইয়ুথ প্রোগ্রাম মনির হাসান। অনুষ্ঠানে ই-ক্লাবের অ্যাডভাইসরস, গভর্নিং বডি ও নিবন্ধিত সদস্যদের প্রাণবন্ত উপস্থিতিতে এক বর্ণিল সন্ধ্যায় রূপ নেয়।

প্রধান অতিথি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর ডাকে নয় মাস সংগ্রামী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এখন বর্তমানে তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে উন্নয়নের পথে ধাবিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, ই-ক্লাব দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করতে একসাথে কাজ করবে। তিনি যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে সকলকে দেশের পাশে দাড়াতে আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবুবক্কর সিদ্দিক বলেন, দেশের সকল উদ্যোক্তাদেরকে একত্রিত করা মহৎ একটি কাজ। আমি আশা করছি, ই-ক্লাব ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নে কাজ করবে।যাতে করে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়া যায়।

ই-ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও বিদায়ী সভাপতি মোহাম্মদ শাহরিয়ার খান বলেন, ২০১৭ সালে অন্ট্রাপ্রেনিয়ার্স ক্লাব অব বাংলাদেশের (ই-ক্লাব) যে যাত্রা আমি শুরু করেছিলাম, তা একটু একটু করে বড় হচ্ছে। আশা করছি, ই-ক্লাবের মাধ্যমে নিবন্ধিত সদস্যরা তাদের ব্যবসায়িক বড় নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। আজকে আগামি দুই বছরের জন্য নতুন ইসিতে যারা থাকছেন, তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। তাদের কাছে প্রত্যাশা করছি, ক্লাব সদস্যদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে সমাধান করবেন।

বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান বলেন,উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ ও গাইডলাইন দিয়ে সার্বিকভাবে কাজ করে থাকে ই-ক্লাব। আমাদের বিদায়ী কমিটি এই কাজগুলো সুনিপুণভাবে করার চেষ্টা করেছে। নতুন নেতৃত্ব উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক পরিধি বাড়ানোর লক্ষ্যে আরও পরিকল্পিত উদ্যোগ নেবে বলে আমার বিশ্বাস। উন্নত ও কার্যকর ই-ক্লাব প্রতিষ্ঠায় আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ আছি।

নবনির্বাচিত সভাপতি লিয়াকত আলী চাকলাদার বলেন, গত ৫ বছর ধরে দেশীয় উদ্যোক্তাদের ইকো সিস্টেমকে উন্নত করার জন্য ই-ক্লাব কাজ করছে। এই সংগঠনে প্রায় পাঁচশ উদ্যোক্তা আছেন। এর মধ্যে ১২০ জন নারী উদ্যোক্তা। যার বেশির ভাগই তরুণ উদ্যোক্তা। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, ছোট-বড় ও মাঝারি পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের নিয়ে ইতিবাচক নেটওয়ার্কিং গড়ে তোলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখা। আগামি দুই বছর ই-ক্লাবের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট হবে বলে প্রত্যাশা করছি।

নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব ঘোষ রাহুলবলেন, আগামির স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে স্মার্ট উদ্যোক্তার বিকল্প নেই। আর সেই স্মার্ট উদ্যোক্তা গড়ে তুলতে কাজ করবে ই-ক্লাব। সফলতার সঙ্গে কাজ করেছে ই-ক্লাবের বিদায়ী কমিটি। তাদের দেখানো পথেই আমরা হাঁটতে চাই। সবাইকে সঙ্গে নিয়েই ই-ক্লাব তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছাবে।

গত  ১ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদ শাহরিয়ার খানকে আহ্বায়ক এবং কামরুল হাসান ও আকতারুল ইসলাম রিমনকে সদস্য সচিব করে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি ই-ক্লাবের গঠনতন্ত্রের ৩০(বি) এবং ৩০(পি) ধারা অনুযায়ী ৪৪৯ জন রেজিস্টার্ড মেম্বার্সদের মধ্যে আগ্রহী ৫১ জন থেকে ১৩ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি নির্বাচিত করেছেন। তারাই আগামি ২০২৩-২৪ মেয়াদ পর্যন্ত ই-ক্লাব পরিচালনা করবেন।

উল্লেখ্য, কয়েকজন স্বপ্নবাজ উদ্যোক্তার দূরদর্শী চিন্তার ফসল হিসেবে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে অন্ট্রাপ্রেনিয়ার্স ক্লাব অব বাংলাদেশ (ই-ক্লাব) আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। পরের বছর সরকারিভাবে নিবন্ধিত হয় সংগঠনটি। এখন পর্যন্ত সংগঠনটির সাড়ে চারশ নিবন্ধিত সদস্য রয়েছে। সদস্য সংখ্যা হাজার পেরুলে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচিত হওয়ার বিধান রয়েছে সংগঠনটির গঠনতন্ত্রে।

সংগঠনটির মূল লক্ষ্য হলো, বেকারদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা, উদ্যোক্তা সহায়ক প্রশিক্ষণ, তহবিল গঠন এবং ক্লাব সদস্যদের নিজেদের মাঝে ব্যবসার নেটওয়ার্ক বাড়ানো। সংগঠনটি মনে করে, উদ্যোক্তা তৈরির জন্য প্রয়োজন সমষ্টিগত কর্মপরিকল্পনা। আর সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে তারা। দুটি কমিটি, চারটি ফোরাম ও ১৩টি স্ট্যান্ডিং কমিটি নিয়ে সদস্যদের সার্বিক ব্যবসায়িক উন্নয়নে কাজ করছে ই-ক্লাব।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে