যে রাজনীতি নারীর পক্ষে, মানুষের পক্ষে, মানবাধিকারের পক্ষে সে রাজনীতি বেছে নিতে হবে। যে রাজনীতি নারীর অধিকারের স্বীকিৃতি দেয় না, তার কী দরকার? জাতীয় নারী দিবস উপলক্ষে আজ রাজধানীর আগারগাঁয় পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) আয়োজিত সভায় এ কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘নারী সবচেয়ে বেশি দায়িত্বশীল। রান্না করবে কে? নারী। শেলাই করবে কে? নারী। ঘর ধুয়ামোছা করবে কে ? নারী। কিন্তু যখনই এর সঙ্গে অর্থপ্রাপ্তি যোগ হয়, তখন দর্জি পুরুষ, বাবুর্চি পরুষ এবং ক্লিনারও পরুষ। যে কাজ আর্থিক সংশ্লেষ ছাড়া করা হয় সেটি নারীর কাজ। আর অর্থ যোগ হলেই তা পুরুষের। এটি সমাজের তৈরি করা। ’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাকরিতে অনেক জায়গায় দেখছি নারী। ৭২-এর সংবিধানে নারীর সমানাধীকারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আজ যারা নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করেন সেখানেও ক্ষমতায়নে নারীর অবস্থান তৈরি হয়নি। এটি সত্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী, সংসদ উপনেতা, স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা নারী। অথচ সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় নারীর অবস্থান এখনও কম। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এতো বিশাল মন্ত্রণালয়। আমি মন্ত্রী নারী। মাঠ পর্যায়ে অনেক শিক্ষক আছেন নারী । কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় নারী খুব কম। ’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৭ সালের নারী নীতিমালা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ১৯৯৭ সালের নারী নীতির মৌলিক কতগুলো বিষয় ছিলো। সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকারসহ বিভিন্ন মৌলিক বিষয় ছিলো। কিন্তু ২০০৫ সালে রাতের অন্ধকারে সেই নারী নীতিকে ছিঁড়ে-খুঁড়ে একেবারে ধ্বংস করে দেওয়া হলো। কারণ তখন যে সরকার সেই সরকারের মূল অংশে ছিলো একটি মৌলবাদী দল। মূল দলটিও নারী দিদ্বেষী, তার যথেষ্ট প্রমাণও আছে। নারী নীতিটাকে পাল্টে ফেলার পর যেটা হলো—আবার যখন ২০১১ সালে নারী নীতিটি করলাম, তখন মৌলিক যে পরিবর্তন আনা হয়েছিল, আমাদের রাজনীতির যে চেহারা এতোখানি পাল্টে গেল আমরা ১৯৯৭ সালের নীতিমালার মৌলিক জায়গায় ফিরে যেতে পারিনি। কিন্তু আমাদের ওই জয়গায় যেতে হবে। ’
নারীর অধিকার ও রাজনীতি প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘যে রাজনীতি মানুষের স্বীকিৃত দেয় না। মানুষের অধিকারের স্বীকিৃতি দেয় না। নারীর মানবাধিকারের স্বীকৃতি দেয় না। সেই রাজনীতির কী দরকার? যারা যুদ্ধপরাধ করেছে, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে, নারী নির্যযাতন করেছে যারা সেই অপরাধীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়, নারীর অধিকার লঙ্গণ করার সমস্ত কায়দা কানুন তাদের মাধ্যমেই হবে। তাহলে নারী কেনও সেই রাজনীতিকে সমর্থন দেবে? সমর্থন দেওয়া উচিত নয়। যারা প্রগতির কথা ভাবেন তাদেরও সেই রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেওয়ার কারণ নেই। নারীর অধিকার তো রাজনৈতিক বিষয়। ’
রাজনীতির বাইরে কোনও মানুষ নেই
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সকাল বেলা কল চালালে পানি আসে। এটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। আমার বাচ্চটি স্কুলে পড়তে যায় সেটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। আমার খাবার আসে সেটিও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ফল। অনেকের এরকম ধারণা আছে—‘আমি রাজনীতিতে থাকি না বাবা’। কিন্ত আমরা যা কিছু করছি তার সব সিদ্ধান্তই নিচ্ছে রাজনীতি। আমি যদি রাজনীতি থেকে নিজেকে দূরে রাখি, যদি ভাবি আমি ওর কাছে যাবো না। তার মানে হচ্ছে আমি আমার দায়িত্ব পালন করছি না। আমি সচেতন না। তবে সাবইকে রাজনৈতিক দল করতে হবে এমন না। তবে রাজনীতি সচেতন হতে হবে। দেশের অর্ধেক জন সংখ্যা নারী। সেই নারীকে নিজের স্বার্থে শতভাগ জনগণের স্বার্থে সেই রাজনীতিকে চেছে নিতে হবে যে রাজনীতি নারীর পক্ষে, মানুষের পক্ষে। যে রাজনৈতিক দল অসাম্প্রদায়িক সেই রাজনীতিকেই বেছে নিতে হবে। আজ ২০২২ সালের যে বাংলাদেশ পেয়েছি। তা এগিয়ে নিতে হবে বহদূর।
মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে এবং পুরো পৃথিবী থেকে নারীর প্রতি সহিংসতা দূর করতে হবে। সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় রীতি-নীতিতে একজন নারীকে অসংখ্য ‘না’ এর মাঝে বেড়ে উঠতে হয়। এমনকি জোরে হাসলেও যেনও একটি অপরাধ। এতো বেশি না না শুনতে শুনতে একজন নারীর চারপাশে একটি শক্ত দেওয়াল তৈরি হয়। এটি ভেঙ্গে বের হওয়াই তো একজন নারীর জন্য শক্ত যুদ্ধ। অধিকাংশ মেয়েরা দেয়ালটা ভেঙে বের হতে পারে না। দেয়ালটাকে ভাঙার জন্য নারীকে সাহস জোগাতে হবে। নারীকে তার অন্তর নিহিত শক্তিটাকে উপলদ্ধি করতে হবে। সেই শক্তি দিয়ে নারীকে সব পেতে হবে। ’