সুপ্রিয় ৪১ তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার পরীক্ষার্থীরা, শুভেচ্ছা নিয়ো । লিখিত পরীক্ষার আবশ্যিক বিষয়গুলোর পরীক্ষা আগামী ২৯ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে।  সাধারণ কারিগরি/পেশাগত উভয় ক্যাডারদের জন্য আগামী ৩০ নভেম্বর ৪১ তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় বাংলাদেশ বিষয়াবলীতে ২০০ নম্বরের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার সুবিধার্থে আজ লিখিত পরীক্ষায়  বাংলাদেশ বিষয়াবলী বিষয়ের সিলেবাস ও দরকারী পরামর্শ নিয়ে আলোচনা করা হলো।

বাংলাদেশ বিষয়াবলী

লিখিত পরীক্ষায় বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে ২০০ নম্বর থাকবে। একটু কৌশলী হলেই সর্বোচ্চ নম্বর ওঠানো সম্ভব।  লিখিত পরীক্ষায় আপনাকে চার ঘণ্টায় ২০০ নম্বরের উত্তর লিখতে হবে।  পরীক্ষায় ৫ নম্বরের একটি প্রশ্নে ৬ মিনিটের বেশি সময় নেওয়া যাবে না। বিগত বছরের বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রগুলো দেখে নিবেন। তাহলে প্রশ্নপত্র সম্পর্কে আপনার ধারণা তৈরি হয়ে যাবে। সবগুলো প্রশ্নের উত্তর করবেন। দ্রুতগতিতে উত্তর লেখার অভ্যাস করুন, তবে এ জন্য যেন লেখা অস্পষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। মাথা খাটিয়ে, প্রাসঙ্গিক তথ্য দিয়ে উত্তর লেখার অভ্যাস করুন। সব প্রশ্ন কমন নাও আসতে পারে। তবে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন। প্রশ্নের উত্তরে চার্ট, সারণি, মানচিত্র  এবং যেকোনো সমীক্ষার তথ্য দিলে বেশি নম্বর পাবেন। প্রশ্নের উত্তর প্যারা করে লিখবেন।

সিলেবাসের যেসব বিষয় গুরুত্ব দিয়ে পড়বেন : বাংলাদেশের ভূগোল : বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি (টারশিয়ারি যুগের পাহাড়সমূহ, বিভিন্ন সোপান এবং সাম্প্রতিক কালের প্লাবন সমভূমি), জলবায়ু ও আয়তন, ভূ-কৌশলগত অবস্থান (দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান যেমন—বঙ্গোপসাগর, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর এবং ভারতের সঙ্গে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর বিভিন্ন করিডর ও ট্রানজিট সম্পর্কে ভালো করে পড়বেন। বাংলাদেশের অর্থনীতি, সমাজ, সাহিত্য ও সংস্কৃতি, ভিশন- ২০২১, জিএনপি, এনএনপি, জিডিপি,  বাংলাদেশের পরিবেশ, প্রকৃতি, চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদকে টেকসই ভাবে কাজে লাগানোর ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে গুরুত্ব দিয়ে পড়বেন।

বাংলাদেশের সংবিধান: বাংলাদেশের সংবিধান যেমন—প্রজাতন্ত্র অনুচ্ছেদ (১-৭), রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি ও মৌলিক অধিকার; এ ছাড়া নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা, বিচার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশনের অনুচ্ছেদ-১১৮, ১১৯, ১২১, ১২২, ১২৫, ১২৬ পড়বেন। এর সঙ্গে সংবিধান সংশোধন (১৪২) ও একাদশ ভাগের অনুচ্ছেদ- ১৪৫, ১৪৫ (ক), ১৪৭, ১৪৮, ১৫০ ভালোভাবে পড়বেন। সংবিধানকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করবেন, যেমন—পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য প্রসঙ্গে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৮ (ক) ব্যবহার করবেন। নারীর অধিকার বা ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে ২৮ (২), উপজাতি ও নৃগোষ্ঠী সম্পর্কিত প্রশ্নে ২৩ (ক) ব্যবহার করবেন। সংবিধানের তফসিল ৫ম, ৬ষ্ঠ, ৭ম অবশ্যই পড়বেন। এ ছাড়া সংবিধানের সংশোধনীগুলো পড়বেন।

সরকারের অঙ্গ: ক) আইনসভা: প্রতিনিধিত্ব, আইন প্রণয়ন, আর্থিক ও তদারকি কাজ, পদ্ধতির নিয়ম, লিঙ্গ সংক্রান্ত সমস্যা, আইনসভার পরিষদ/পার্লামেন্টারি পার্টি, সংসদ সচিবালয় সম্পর্কে পড়বেন।

খ) নির্বাহী: প্রধান ও বাস্তব নির্বাহী যেমন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, ক্ষমতা ও কার্যাবলী, মন্ত্রিসভা, মন্ত্রী পরিষদ, ব্যবসার নিয়ম, আমলাতন্ত্র, সচিবালয়, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, প্রশাসনিক সেটআপ- জাতীয় এবং স্থানীয় সরকার কাঠামো, বিকেন্দ্রীকরণ কর্মসূচি এবং স্থানীয় স্তরের পরিকল্পনা সম্পর্কে পড়বেন।

গ) বিচার বিভাগ: কাঠামো: সুপ্রিম, হাই এবং অন্যান্য অধস্তন আদালত, সংগঠন, ক্ষমতা এবং সুপ্রিম এর কার্যাবলী। আদালত, নিয়োগ, মেয়াদ এবং বিচারকদের অপসারণ, সাব-অর্ডিনেট আদালতের সংগঠন, বিচার বিভাগ থেকে পৃথকীকরণ নির্বাহী, বিচারিক পর্যালোচনা, বিচার, গ্রাম আদালত, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) সম্পর্কে পড়বেন।

বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতি এবং বহিরাগত সম্পর্ক: লক্ষ্য, নির্ধারক এবং নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়া, জাতীয় শক্তির কারণসমূহ, নিরাপত্তা কৌশল, ভূ-রাজনীতি এবং পরিবেশগত সমস্যা, অর্থনৈতিক কূটনীতি, মানবশক্তি শোষণ। আন্তর্জাতিক সংস্থায় অংশগ্রহণ, ইউএনও এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন, নাম, সার্ক, ওআইসি, বিমসটেক, ডি-8 ইত্যাদি, এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, বৈদেশিক সাহায্য, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কে পড়বেন।

এ ছাড়া সরকারের নীতিনির্ধারণ, ভিশন-মিশন (রূপকল্প-২০২১, ভিশন-২০৪১ প্রত্যাশা ও চ্যালেঞ্জ), ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ সম্পর্কে পড়বেন । তৈরি পোশাক নিয়ে বিস্তর জানবেন, যেমন—অর্থনীতিতে অবদানসহ এই শিল্পের ভবিষ্যৎ ও করণীয় সম্পর্কে পড়বেন।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত, চীন ও মিয়ানমারের সম্পর্ক; মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া ও আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কে পড়বেন।

বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিসহ সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ এবং প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থার উক্তি নোট করে পড়বেন।

রাজনৈতিক দল: ঐতিহাসিক উন্নয়ন, নেতৃত্ব, সামাজিক ভিত্তি, গঠন, মতাদর্শ এবং প্রোগ্রাম, জোটের রাজনীতি, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সম্পর্ক, নির্বাচনী আচরণ, সরকার পক্ষ এবং বিরোধীদলীয় পক্ষ সম্পর্কে পড়বেন।

 বাংলাদেশে নির্বাচন : নির্বাচনী রাজনীতির ব্যবস্থাপনা: নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা, নির্বাচনী আইন, প্রচারণা, গণআদেশের প্রতিনিধিত্ব (RPO), নির্বাচন পর্যবেক্ষণ দল সম্পর্কে পড়বেন।

আরো কিছু বিষয় : সমসাময়িক যোগাযোগ, আইসিটি, মিডিয়ার ভূমিকা, তথ্য অধিকার (RTI), এবং ই-গভর্নেন্স সম্পর্কে পড়বেন।

অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠান, নাগরিক সমাজের ভূমিকা, স্বার্থান্বেষী দল, এবং বাংলাদেশে এনজিও সম্পর্কে পড়বেন।

 বিশ্বায়ন এবং বাংলাদেশ: অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মাত্রা; WTO, World Bank, IMF, ADB, IDB এবং অন্যান্য উন্নয়ন অংশীদার এবং মাল্টি ন্যাশনাল কর্পোরেশন (এমএনসি) সম্পর্কে পড়বেন।

মুক্তিযুদ্ধ এবং তার পটভূমি: ভাষা আন্দোলন ১৯৫২, ১৯৫৪ নির্বাচন, ছয় দফা আন্দোলন ১৯৬৬, গণউত্থান ১৯৬৮-৬৯, সাধারণ নির্বাচন ১৯৭০, অসহযোগ আন্দোলন, ১৯৭১, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ। মুজিবনগর সরকারের গঠন ও কার্যাবলী, প্রধান ক্ষমতা এবং জাতিসংঘের ভূমিকা, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ, স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে পড়বেন। এই অংশ থেকে ৫০ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে।

ইতিহাস (১৯০৫-১৯৪৭), বঙ্গভঙ্গ ও স্বাধীনতা (১৯৪৭-১৯৭১) সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও সাল জানা থাকতে হবে। ভাষা আন্দোলন নিয়ে লেখার জন্য ১৯৫২ সালের পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে বাংলা ও অন্যান্য ভাষাভাষী লোকজনের একটা পরিসংখ্যান প্রস্তুত করে পড়বেন। এর সঙ্গে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিভিন্ন দল ও তাদের প্রাপ্ত আসনসংখ্যা নিয়েও চার্ট তৈরি করতে পারেন। এ ছাড়া স্বাধীনতার ঘোষণা ও ৭ই মার্চের ভাষণ পড়লে মুক্তিযুদ্ধসংশ্লিষ্ট প্রশ্নের উত্তরে সেগুলো উক্তি হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন, মতাদর্শ ও অবদান ভালোভাবে পড়বেন। এ ক্ষেত্রে শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বইগুলো পড়তে পারেন।

নমুনা প্রশ্ন

৪১ তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার পরীক্ষার্থীদের বাংলাদেশ বিষয়াবলীতে প্রস্তুতি নেয়ার সুবিধার্থে কতগুলো নমুনা প্রশ্ন দেওয়া হলো। এগুলো তোমরা নোট করে পড়তে পারো। তবে এর বাইরেও যা আপনাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় তা শিখে নেবেন।

প্রশ্ন: ক. রেমিট্যান্স কী?  খ. রেমিট্যান্স আয়ে দক্ষ মানব সম্পদের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করুন। গ.বাংলাদেশের উন্নয়নের রেমিট্যান্সের ভূমিকা আলোচনা করুন।

প্রশ্ন: ক.নরগোষ্ঠী ও জাতির মধ্যে পার্থক্যসমূহ লিখুন। খ. বাংলাদেশ ভূ-প্রকৃতিতে প্রবাল দ্বীপের গুরুত্ব কী? গ.পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের বর্ণনা দিন।

প্রশ্ন: ক.বিশ্ব পরিবেশ আন্দোলনের বাংলাদেশের ভূমিকা বর্ণনা করুন। খ.বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ কীভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে?  গ.ক্ষতি মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ কী কী ?

প্রশ্ন: ক. বাংলাদেশ পরিবেশ নীতি কী? খ. পরিবেশ সংরক্ষণে কী কী উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে ? গ. বিশ্ব উৃঞ্চায়ন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ কী ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আলোচনা করুন।

প্রশ্ন: ক. অর্থ বিল কী? খ. সংবিধান অনুযায়ী অর্থবিলে কোন বিষয়বলি সংলিত থাকে? গ.কোন মন্ত্রণালয় এটা প্রণয়ন ও অনুমোদন প্রক্রিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত  এবং এর সার্বিক অনুমোদন প্রক্রিয়া বর্ণনা করুন।

প্রশ্ন: ক. বাঙালি জাতীয়তাবাদর উদ্ভবে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব আলোচনা করুন। খ.১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনের প্রভাব ও ফলাফল ব্যাখ্যা করুন। গ.বাঙালি জাতীয়তাবাদ কীভাবে  পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে অনুপ্রণিত করে ব্যাখ্যা করুন।

প্রশ্ন: ক. GDP তে কৃষিখাতে অবদান সম্পর্কে লিখুন। খ. কৃষির আধুনিকায়নে বিদ্যমান সমস্যাগুলো কী কী?  গ. বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়নের কী কী পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

প্রশ্ন: ক. ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে কোন দল জয়ী হয়? নির্বাচনে মুসলিম লীগের পরাজয়ের কারণ লিখুন। খ. বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস  আলোচনা করুন।

প্রশ্ন: ক. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বহির্বিশ্বের ভূমিকা কী ছিল? আলোচনা করুন । খ.মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র বাংলাদেশকে কয়টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল? প্রত্যক সেক্টর কমান্ডারের নাম লিখুন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে