এর নাম দায়িত্ববোধ! ওমানের রাজধানী মাসকাট থেকে ১২২ যাত্রী নিয়ে ঢাকায় আসছিল বিমানের একটি বোয়িং ৭৩৭ ফ্লাইট। মাঝপথে পাইলট হঠাৎ করে ভীষণ অসুস্থ বোধ করলেন। নিজের তীব্র কষ্টের মধ্যেও ১২২ জন যাত্রীর কথা তাঁর মাথায়।

জরুরি অবতরণের জন্য পাইলট বার্তা দিলেন কাছের কলকাতা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলে। তারা নিকটবর্তী নাগপুর বিমানবন্দরে অবতরণের পরামর্শ দেন। এরপর পাইলট সেখানে জরুরি অবতরণ করেন। তবে যাত্রীরা সবাই সুরক্ষিত আছেন। কিন্তু অসুস্থতার কারণে পাইলটকে হাসপাতালে নিতে হয়েছে। না, এটি কোন সিনেমার গল্প নয়, বাস্তব জীবনের গল্প। গতকাল শুক্রবার এই ঘটনা ঘটেছে। আর এই গল্পের নায়ক বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অভিজ্ঞ পাইলট ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইয়ুম।

খবরটা পড়ার পর থেকে ভাবছি একজন মানুষের ভেতর কী দারুণ পেশাদারিত্ব ও দায়িত্ববোধ থাকলে এতো দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেওয়া যায়। নিজ নিজ কাজে সবাই যদি এভাবে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতেন।

বেশ কয়েকটি খবরে দেখলাম, পাইলটের হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। অবশ্য ‘হার্ট অ্যাটাক’ হয়েছিল কি না, সেটি নিশ্চিত করেনি বিমান।‌ তবে ৪৫ বছরের ক্যাপ্টেন নওশাদের এনজিওগ্রাম হয়েছে৷ তিনি এখন ঝুঁকিমুক্ত রয়েছেন বলে জানা গেছে। দোয়া করি তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন।

পেশাদারিত্ব ও দায়িত্বশীলতার যে পরিচয় পাইলট দেখিয়েছেন সেজন্য তাকে ধন্যবাদ। আজ কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি বলেই হয়তো এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা নেই। কিন্তু ১২২ জন মানুষের প্রতি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়ার জন্য নিশ্চয়ই পাইলট ধন্যবাদ পাবেন।

ধন্যবাদ পেতে পারেন ওই ফ্লাইটে তার সব সহকর্মীরা। তিনি যখন অসুস্থ কোপাইলটের সঙ্গে নিশ্চয়ই পরামর্শ করেছেন। কোপাইলট নিশ্চয়ই এই সময় সাহসিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। নিশ্চয়ই সজাগ ছিলেন ত্রুরা। আমি এই পুরো টীমকে ধন্যবাদ জানাই। সবাই নিশ্চয়ই তাকে সহযোগিতা করেছেন।

তবে জেনে ভালো লাগলো যে এবারই প্রথম নয়। পাঁচ বছর আগে আরেকটি ঘটনায় দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে দেড়শ মানুষকে বাঁচিয়ে ছিলেন তিনি ও তাঁর সহ পাইলট। তাও এই মাসকট থেকেই। সেবার ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছিল। দিনটি ছিল ২২ ডিসেম্বর। ওমান থেকে ফ্লাইটটি যাচ্ছিল চট্টগ্রাম।

ওমানের স্থানীয় সময় তখন রাত তিনটা। গভীর রাতে দেড় শতাধিক আরোহী নিয়ে মাসকট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গর্জন করে আকাশে উড়াল দিতে যাচ্ছিল বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ। গন্তব্য ছিল চট্টগ্রাম। কিন্তু মাসকট বিমানবন্দরে রানওয়ে থেকে উড়াল দেওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে উড়োজাহাজটিতে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।

পরে কন্ট্রোল টাওয়ারে দফায় দফায় যোগাযোগ করে জানতে পারেন ল্যান্ডিং গিয়ারের ডান পাশের চাকার টায়ার ফেটেছে। তবে শুরু থেকেই যাত্রীদের আতঙ্কিত না হতে বলেন ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইয়ুম। তিনি ও ফার্স্ট অফিসার মেহেদী হাসান বুঝতেও পারছিলেন, কী ঘটেছে। ১৮ টন জ্বালানি আর উড়োজাহাজটির ওজন ৬০ টন। সব মিলিয়ে ৭৮ টন ওজনের বিশাল উড়োজাহাজের ওমানে জরুরি অবতরণ করাও অসম্ভব। একটু এদিক-সেদিক হলেই বিস্ফোরিত হতো উড়োজাহাজটি। প্রাণ যেতে পারত সব আরোহীর।

তবে পাঁচ ঘণ্টা পথ পাড়ি দিয়ে ঢাকায় জরুরি অবতরণ করান ক্যাপ্টেন নওশাদ। জীবন রক্ষা পায় দেড় শ যাত্রীর। এই দুঃসহ অভিযাত্রার স্বীকৃতি হিসেবে বৈমানিকদের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব এয়ারলাইনস পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের প্রশংসাপত্র পেয়েছিলেন।

আসলে দায়িত্বশীলতা হঠাৎ করে একদিন আসে না। এটি চর্চার বিষয়। ধন্যবাদ তাই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। ধন্যবাদ ক্যাপ্টেন নওশাদ।ধন্যবাদ কোপাইলটসহ পুরো টীমকে। আপনাদের কাছ থেকে এই দেশের নানা পেশায় থাকা লোকজন দায়িত্বশীলতা শিখতে পারেন। আজকের সকালটা আপনাদের শ্রদ্ধা জানিয়ে শুরু করছি। শুভ সকাল আপনাদের। শুভ সকাল বাংলাদেশ। এভাবেই দায়িত্ববোধ, পেশাদারিত্ব ও মানবিকতার জয় হোক সবখানে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে