ভূমিকম্প কেন হয়?

ভূমিকম্প শব্দটির সাথে পরিচিত আমরা সবাই। ভূমিকম্প হয় না, এমন কথা বলতে পারবেনা এমন কেউ নেই। আমরা কি জানি, ভূমিকম্প কেন হয়? বা রিখটার স্কেলের মাত্রা অর্থ কি? তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক, ভূমিকম্পনের কারণ, রিখটার স্কেলের পরিমাপের অর্থ কি?

রিখটার স্কেল কি এবং এর মাত্রা গুলো দিয়ে কি বোঝায়?

আমরা জানি রিখটার স্কেল দিয়ে ভূমিকম্পের মাত্রা ও ক্ষয় ক্ষতির  পরিমাপ হিসাব  করা যায়।  এটি একটি ১০-ভিত্তির লগারিদমীয় পরিমাপ। অর্থাৎ এই পরিমাপে যেকোনো সংখ্যার ভূমিকম্প পূর্ববর্তী সংখ্যার চাইতে ১০ গুন শক্তিশালী। যেমন, ৩ মাত্রার ভূমিকম্পের চেয়ে ৪ মাত্রা ভূমিকম্প ১০ গুন বেশি শক্তিশালী। তো চলুন দেখে নিই কোন মাত্রায় কি বোঝায় এবং ক্ষতির পরিমাণ কেমন হয় ?

০-১.৯ রিখটার স্কেলে ভূমিকম্প এলে শুধুমাত্র সিজমোগ্রাফ থেকেই তা জানা যায়৷

২-২.৯ রিখটার স্কেলে, ভূমিকম্প হলে হালকা কম্পন অনুভূত হয়৷

৩-৩.৯ রিখটার স্কেলে, ভূমিকম্প এলে, কোনও ট্রাক বা লরি নিকট দিয়ে গেলে যেমন লাগে এক্ষেত্রেও তেমনই অনুভূত হয়৷

৪-৪.৯ রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পে দরজা-জানলা ভাঙতে পারে বা দেওয়ালে টাঙানো ফ্রেম পড়ে যেতে পারে৷

৫-৫.৯ রিখটার স্কেলে ভূমিকম্প এলে বাড়ির আসবাব পত্রে ঝাঁকুনি শুরু হতে পারে৷

৬-৬.৯ রিখটার স্কেলে ভূমিকম্প এলে বাড়ির ওপরের তলাগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে৷

৭-৭.৯ রিখটার স্কেলে ভূমিকম্প এলে বাড়ি ভেঙে পড়তে পারে৷ ভূ-গর্ভেও ভয়ঙ্কর ফাটল হতে পারে৷

৮-৮.৯ রিখটার স্কেলে ভূমিকম্প হলে বড় বড় বাড়িসহ বড় ব্রিজ বা সেতুও ভেঙে পড়ে যেতে পারে৷

৯ বা তার বেশি কম্পন হলে ভয়ঙ্কর ক্ষয়ক্ষতি হয়৷ সমুদ্র কাছে থাকলে সুনামিও হতে পারে৷

আশা করি এখন থেকে আমরা ভূমিকম্পের মাত্রা শুনে এর সম্পর্কে ভালো একটা ধারণা পেতে পারবো।

বাংলাদেশে ভূমিকম্পের অবস্থা:

আমাদের বাংলাদেশ ” ভারতীয় , ইউরশিয় এবং ,মায়ানমার” টেকটনিক প্লেটের মাঝে আবদ্ধ। এই প্লেট সমূহের নড়াচড়ার  কারণে প্রায়ই  দেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিকগণ বাংলাদেশের মাঝে চারটি ফল্ট লাইন চিহ্নিত করেছেন। সেগুলো হলঃ

১। ডাউকি ফল্ট, যা ভূমির উপরে সিলেট-জৈন্তাপুর/ মেঘালয় বর্ডারে বাংলাদেশের পূর্ব থেকে পশ্চিম বরাবর এবং মাটির গহ্বরে শিলং প্লাটু বরাবর ৩০০ কিমি ধরে চলে গেছে।

২।  ১৫০ কিমি দীর্ঘ মধুপুর ফল্ট , যা  উত্তর থেকে দক্ষিণে মধুপুর  থেকে যমুনায় নদী পর্যন্ত বিস্তৃত।

৩।  আসাম সিলেট ফল্ট যা উত্তর পূর্ব থেকে দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছে ।

৪।  চিটাগাং মিয়ানমার প্লেট বাউন্ডারি যা চট্টগ্রাম এবং মিয়ানমারের সমুদ্রতট ধরে ৮০০ কিমি উত্তর দক্ষিণে অবস্থান  করছে।

বাংলাদেশ ও তৎসংলগ্ন এলাকার ২৫ বছরের ভূমিকম্পের কিছু রেকর্ড :

১৯৯৭ঃ চট্টগ্রামে সংঘটিত হয় ২২ নভেম্বর। এর মাত্রা ছিল ৬.০। এতে চট্টগ্রাম শহরের সামান্য ক্ষতি হয়।
১৯৯৯: মহেশখালি দ্বীপে সংঘটিত হয় জুলাই মাসে। মূল কেন্দ্রবিন্দুও ছিল মহেশখালি দ্বীপ। মাত্রা ছিল ৫.২। মহেশখালি দ্বীপ ও সংলগ্ন সমুদ্রে অনুভূত হয়। বাড়ীঘরে স্থানে স্থানে ফাটল ধরে।
২০০২: এই বৎসরে চট্টগ্রামে মোট ৪০ বার ভূমিকম্প অনুভূত হয়।রাঙ্গামাটি জেলার বরকল উপজেলার কলাবুনিয়া ইউনিয়নে সংঘটিত হয় ২৭ জুলাই। এর মাত্রা ছিল ৫.১। এতে তিনজন লোক নিহত হয়।সুমাত্রা ভূমিকম্প নামে পরিচিত। উত্তর সুমাত্রার পশ্চিম উপকূলে ২৬শে ডিসেম্বর এই ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর মাত্রা ছিল ৯.৩। ভয়াবহ এই ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট সুনামিতে ভারত মহাসাগরের তীরবর্তী ১৪টি দেশে প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ প্রাণ হারায়। এর মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলেও দুইজনের প্রাণহানি ঘটে।
২০০৬: নড়াইল ভূমিকম্প ২০০৬ সালের ৫ই আগস্ট আঘাত হানে। এর মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৪.২ এবং উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে প্রায় ১১০কিমি দক্ষিণপশ্চিমে।
২০০৮: চাঁদপুর ভূমিকম্প ২০০৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর উৎসস্থল ছিল চাঁদপুরের কচুয়াতে। এর মাত্রা ছিল ৪.৫।
২০০৯ ভূটান ভূমিকম্প নামে পরিচিত। ২০০৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর এই ভূমিকম্প হয়। এর উৎসস্থল ছিল ভুটানের পূর্বাঞ্চলে।
২০১০: বঙ্গোপসাগর ভূমিকম্প নামে পরিচিত। ১১ই আগস্ট বাংলাদেশ সময় ০১:৫৫:৩৫.৬১। এর উৎপত্তিস্থল ছিল বঙ্গোপসাগরে উত্তর আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ ও বার্মার সমুদ্র উপকূলে। মাত্রা ছিল ৭.৫। বাংলাদেশে যদিও তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি, তবু ঢাকায় এর তীব্রতায় মাটি কেঁপে উঠেছিল।
২০১৪: সেপ্টেম্বর ১৮ ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে রোববার সন্ধ্যায় একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে যুক্তরাষ্ট্রে জিওলজিক্যাল সার্ভে বলছে, এই ভূমিকম্পের উৎস ছিল সিকিমের কাছে এবং সেখানে তার মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৮ সময়কাল ছিলো ১৫ সেকেন্ড থেকে দুই মিনিট পর্যন্ত।
২০২০: নভেম্বর  তারিখে রাত ১টা ৪৩ মিনিট ২০ সেকেন্ডে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে । এর উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ২৩৪ কিলোমিটার দূরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের নংস্টাইনে। ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৪ রিখটার স্কেল। 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে