গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের চার চারবার জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় চার দশকে উপমহাদেশের অন্যতম, ঐতিহ্যবাহী, রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে তিনি কখনও দেশের প্রধানমন্ত্রী, কখনও বিরোধীদলীয় নেত্রী এবং কখনও রাজপথের আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন। যখন যে অবস্থায় থাকুন না কেন দেশের এবং দেশের কল্যাণের কথাই ভেবেছেন, প্রয়োজনে বহুবার জাতীয় ঐক্যের উদ্যোগ নিয়েছেন। ১৯৮১ সাল থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাঁকে পাড়ি দিতে হয়েছে বন্ধুর, কণ্টকাকীর্ণ পথ, ঢেউয়ের সাগর। হয়েছেন গৃহবন্দী, খেটেছেন জেল-জুলুম, সইতে হয়েছে নানা ধরনের নির্যাতন। জননেত্রীর লক্ষ্য বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার বাস্তবায়ন, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে দলকে, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য ঘুরে বেড়িয়েছেন যুগ যুগ ধরে বাংলার পথে-প্রান্তরে। ১৯ বার তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছে বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরাধিকারী, স্বপ্ন বাস্তবায়নকারী শেখ হাসিনাকে, নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বকে, ’৭৫-এর ধারায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে চিরতরে রুদ্ধ করতে। জননী-সাহসিকা-নির্ভীক জননেত্রী শেখ হাসিনা এগিয়ে চলেছেন শত বাধাবিপত্তি-ষড়যন্ত্র অতিক্রম করে। তাঁর ভাবনা শুধু বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন, বাবার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করা, দেশ এবং দেশের মানুষের কল্যাণ। দলের ভেতরে-বাইরে, জাতীয়-আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সর্বত্রই ষড়যন্ত্র এবং পিচ্ছিল পথ। এর মধ্যেই দেশের কল্যাণের কথা ভেবে, দেশের উন্নয়নের জন্য, দেশবাসীর অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে, দলমত নির্বিশেষে সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য। প্রয়োজনে তিনি বহুবার বৈরী শক্তির সঙ্গেও বসেছেন গণতন্ত্রের জন্য, দেশের মানুষের সুন্দর জীবনের জন্য, বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে মর্যাদাবান জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। এর জন্য তাঁকে জীবনের সকল ঝুঁকি নিতে হয়েছে, কখনও কখনও হতে হয়েছে অসম্মানিত আর ষড়যন্ত্রের শিকার। তিনি অসংখ্য পদক্ষেপ নিয়েছেন বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, উন্নত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য; যা জাতির কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তার কিছু এখানে উল্লেখ করছি-

১) ২১ বছর পর দলের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন : ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর পর্বতপ্রমাণ প্রতিকূল পরিস্থিতি অতিক্রম করে হতাশ, পর্যুদস্ত, বিক্ষিপ্ত, বিভক্ত দলকে ঐক্যবদ্ধ করে নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিয়ে আসেন। বিশ্বের ইতিহাসে এটি একটি বিরল ঘটনা।

২) চার বারের প্রধানমন্ত্রী : একজন রাজনৈতিক নেতার চারবার নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হওয়া বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। অনেক আগেই বিশ্বের শক্তিধর নারীনেত্রী যুক্তরাজ্যের মার্গারেট থ্যাচার, ভারতের শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী, শ্রীলঙ্কার মিসেস কুমারাতুঙ্গার রেকর্ড অতিক্রম করেছেন। এখনও তিনি দেশে এবং আন্তর্জাতিক মহলে জনপ্রিয়তা অক্ষুণ্ণ রেখেছেন। পাশাপাশি নিজের দলকেও টানা তিনবার নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এনেছেন। তাঁর কর্মের স্বীকৃতি হিসেবে বিশ্বব্যাপী অর্জন করেছেন নানা সম্মাননা, উপাধি এবং পুরস্কার যার সংখ্যা প্রায় ৩৯।

৩) সংসদীয় গণতন্ত্রে উত্তরণ : ১৯৯১ সালের নির্বাচনে কারচুপির ভোটে হেরে গেলেও ১৯৯১ এর সংসদে নিজে উদ্যোগ নিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনেন। এর জন্য তাঁকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গেও বসতে হয়েছে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়া-এরশাদ পাকিস্তানী ধারায় রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকার চালু করে। শেখ হাসিনার উদ্যোগে সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরে আসায় স্বৈরাচারী সরকার পদ্ধতির অবসান ঘটে ।

৪) স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে প্রধান নেতৃত্ব দান : স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে মূল নেতৃত্ব দিয়েছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রধান শক্তি ছিল তাঁর দল আওয়ামী লীগ। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে হয় আওয়ামী পরিবারকে। এ আন্দোলনের জন্য তিনি বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল প্রগতিশীল দলের সঙ্গে আলোচনা করেন। বিভিন্ন জোটের প্রধান নেতা হিসেবে তিনি গণঅভ্যুত্থান ’৯০ সংঘটিত করেন।

৫) বিচারপতি সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন: একটি দলীয় সরকারে একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। বিচারপতি সাহাবুদ্দিন ’৯০ এর গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন। এ দায়িত্ব পালনকালে তিনি দেশের মানুষের গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেন। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার স্বার্থে, জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তিনি এ ঝুঁকিপূর্ণ কাজটি করেছিলেন, যার সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে পরাজিত হয়েছিল। পরিণতি কি হয়েছিল তা দেশের মানুষ ওয়াকিফহাল।

৬) পদ্মা বহুমুখী সেতু : শেখ হাসিনার নেতৃতে বাংলাদেশের উন্নয়নের সবচেয়ে বড় মাইলফলক হচ্ছে পদ্মা সেতু নির্মাণ। মিথ্যা অভিযোগে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্প বাতিল করে দিয়ে শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশকে চাপের মুখে ফেলে। বঙ্গবন্ধুকন্যা ভেঙ্গে পড়ার মানুষ নন। সিদ্ধান্ত নিলেন নিজস্ব উদ্যোগে পদ্মা সেতু নির্মাণ করবেন। আজ পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আশা করা হচ্ছে আগামী বছর চালু করা হবে। পরবর্তীতে কানাডার আদালতেই অভিযোগটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়। শেখ হাসিনার সাহসী পদক্ষেপের জন্য শেখ হাসিনা সরকার এবং বাংলাদেশ দুটোরই বিশ্বে মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হলে উন্মোচিত হবে দক্ষিণ বাংলার অর্থনীতিসহ উন্নয়নের সকল দুয়ার, আরও শক্তিশালী হবে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত।

৬) পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি : সুদীর্ঘ দুই দশকের অধিক সময় ধরে চলে বাংলাদেশের ভূস্বর্গ পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র সংঘাত, বিদ্রোহ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, হত্যা। পরিণত হয় এক অশান্ত বিরান ভূমিতে। ১৯৯৬ সালে সরকারে দায়িত্ব গ্রহণ করে উদ্যোগ নেন এ পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধানের। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় স্থায়ী সমাধান এবং শান্তি।

৭) শেখ হাসিনার উন্নয়নের ভিশন : ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি ইশতেহারে যুক্ত করেন নতুন উন্নয়ন ও বাংলাদেশের আধুনিকায়নের ধারা ‘রূপকল্প ২০২১’, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বা ‘দিন বদলের সনদ।’ ২০২১ এর অনেক আগেই রূপকল্পের অধিকাংশ কর্মসূচী বাস্তবায়ন হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যখন উন্নয়নের মহাসড়কে তখন তিনি ২০১৪’র নির্বাচনের ইশতেহারে উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা নিয়ে ঘোষণা দিলেন ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।’ ২০১৮’র নির্বাচনী ইশতেহারে যুক্ত করলেন ‘সমৃদ্ধি যাত্রায় বাংলাদেশ’ যার মধ্যে গ্রামের উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রাধান্য পেল- গ্রামে যাবে শহরের সুবিধা। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল। তিনি ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন ‘উন্নত বাংলাদেশ ২০৪১’ এবং ‘ডেল্টা প্ল্যান ২১০০।’ বঙ্গবন্ধুকন্যা বাংলাদেশের মানুষের জন্য উন্নয়নের মহাসড়ক বানিয়ে দিয়েছেন। এখন সকলের দায়িত্ব এ ধারাকে অব্যাহত রেখে উন্নত বাংলাদেশে পৌঁছে যাওয়া।

৮) বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার : বাংলাদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর ঋণ কোনদিন শোধ করতে পারবে না। জাতির পিতাকে হত্যাকারীদের বিচারের জন্য দেশের মানুষ কষ্ট নিয়ে অপেক্ষায় ছিল। অনেকেই ব্যথা নিয়ে বলেছেন, মৃত্যুর আগে যদি বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচারটা দেখে যেতে পারতাম। বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশবাসীর সেই আকাক্সক্ষা পূরণ করেছেন। মহান জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের বাধা ইনডেমনিটি বিল বাতিল করে আইনের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী শেখ হাসিনা জাতির পিতার হত্যার বিচারের ব্যবস্থা করেছেন। জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে।

৯) যুদ্ধাপরাধীদের বিচার : শহীদ-লাঞ্ছিত পরিবারসহ দেশের মানুষের দীর্ঘদিনের আকাক্সক্ষা এবং দাবি ছিল একাত্তরের মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ’৭২ সালেই আইন প্রণয়ন করে তাদের বিচার শুরু করেছিলেন এবং অনেকটাই করে ফেলেছিলেন। ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর স্বাধীনতাবিরোধী জিয়া সরকারে এসে সে বিচার বন্ধ করে দেয়। ২০০৯ এ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সরকারে এসে সে বিচার কার্যক্রম শুরু করেন। কঠিন বাধাবিপত্তি এবং আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে তিনি নিজামী-মুজাহিদ-সাকা চৌধুরীসহ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাস্তবায়ন করেন।

১০) জেল হত্যার বিচার : ১৯৭৫’র ৩ নবেম্বর বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠতম সহচর জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, মোঃ কামরুজ্জামানকে জেলখানায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। শেখ হাসিনা হত্যাকারীদের বিচার কাজ সম্পন্ন করেছেন।

১১) উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ শুক্রবার রাতে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে যাওয়ার সুপারিশ পেয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) পাঁচ দিনের বৈঠক শেষে এ সুপারিশ করেছে। মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ, জলবায়ু ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা- এই তিন সূচক দিয়ে একটি দেশ উন্নয়নশীল দেশ হতে পারবে কি না, সেই যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়। যে কোন দুটি সূচকে যোগ্যতা অর্জন করতে হয় কিংবা মাথাপিছু আয় নির্দিষ্ট সীমার দ্বিগুণ করতে হয়। ২০১৮ সালে প্রথম দফায় বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বের হওয়ার যোগ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এবারও প্রথমবারের মতো তিনটি সূচকেই প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জন করেছে।

১২) মেগা প্রকল্প : মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্প, মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পসহ বেশকিছু মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন, ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, দুই ডজনের বেশি হাইটেক পার্ক এবং আইটি ভিলেজ নির্মাণের বিপুল কর্মকান্ড দ্রুত এগিয়ে চলেছে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি পরিকল্পনা ও তত্ত্ব¡াবধানে।

১৩) অর্থনৈতিক সফলতা :

ক) আর্থিক বৃদ্ধি বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি : কোন একটি দেশের অর্থনীতি পরিমাপের মাপকাঠি হচ্ছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি। জিডিপির আকার এখন ১০০ বিলিয়ন থেকে ২৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। গত ১২ বছরে বাংলাদেশ একটি স্থিতিশীল জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এর মধ্যে টানা ছয় বছর (২০০৯-১০ থেকে ২০১৪-১৫) প্রবৃদ্ধি ছয় শতাংশের ঘরে অবস্থান করে। সেই ছয় শতাংশের বেড়াজাল ভেঙ্গে ২০১৫-১৬ থেকে ১০১৭-১৮ পর্যন্ত ৩ অর্থবছরে ৭ শতাংশের ওপর এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আট শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়। যা উন্নত দেশগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ কোয়ার্টারে মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে অর্থনীতি দারুণ চাপের মধ্যে পড়ে। তা সত্ত্বেও ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ২ শতাংশ (বিবিএস)।

প্রাক্কলন অনুয়ায়ী চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ৭ দশমিক ৪ শতাংশে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রক্ষেপণ অনুযায়ী জিডিপির প্রবৃদ্ধির হারে বাংলাদেশের অবস্থান হবে এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। আইএমএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল তৃতীয়। এই জিডিপির ওপর ভর করেই দ্য ইকোনমিস্টের ২০২০ সালের প্রতিবেদনে ৬৬ উদীয়মান সবল অর্থনীতির দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ৯ম অবস্থানে উঠে এসেছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৪তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।

খ) মাথাপিছু আয় : সবচেয়ে নজরকাড়া অগ্রগতি হয়েছে মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিতে। ১২ বছরে মাথাপিছু আয় বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। ২০০৯-১০ সালের মাত্র ৭৭৫ মার্কিন ডলার থেকে ২০১৯-২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৪ ডলার।

গ) বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে রেকর্ড : কোন্ দেশের অর্থনীতি কতটা শক্তিশালী তা যাচাইয়ের জন্য সাধারণত দুটি সূচকের প্রতি দৃষ্টি দিয়ে থাকেন বিদেশী বিনিয়োগকরীরা। একটি হলো ওই দেশের প্রবৃদ্ধি এবং অন্যটি হলো দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি মোটামুটি উৎসাহব্যঞ্জক থাকলেও, রিজার্ভ ততটা আশাপ্রদ ছিল না।

দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৪৪.০৩ বিলিয়ন ডলার অথচ ২০০৯ সালে এই রিজার্ভ ছিল মাত্র ৫০০ কোটি ডলার।

১৪) প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আমন্ত্রণ : ২০০০ সালের ৮ মে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সমঝোতার ভিত্তিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য সরাসরি টেলিফোন করে আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু শেখ হাসিনার এই অনন্য দৃষ্টান্ত বেগম খালেদা জিয়া প্রত্যাখ্যান করে দেশে নিন্দার ঝড় তোলেন। বেগম খালেদা জিয়া সেদিন দেশে ঐক্যের রাজনীতির সম্ভাবনাকে গলা টিপে হত্যা করেন। স্মরণ করা যেতে পারে ১৯৯৬ এর ফেব্রুয়ারিতে খালেদা জিয়া সরকার একটি ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছিল যা পরে আন্দোলনের মুখে বাতিল করতে বাধ্য হয় ।

১৫) ২০১৪ এর নির্বাচনের আগে বেগম খালেদা জিয়াকে সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের আমন্ত্রণ : ২০১৩ সালের ২৬ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সরাসরি টেলিফোনে নৈশভোজসহ নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠন নিয়ে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু দুঃখজনক যে, বেগম খালেদা জিয়া হরতালের নামে তা প্রত্যাখ্যান করেন। শেখ হাসিনা বিনপিকে তাদের দাবি অনুযায়ী মন্ত্রণালয় বণ্টনের আশ্বাসও দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনার এ মহতী উদ্যোগ বেগম খালেদা জিয়ার একগুঁয়েমির জন্য ভেস্তে যায় ।

১৬) ২০১৮ সালে ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সকল দলের সঙ্গে বৈঠক : ২০১৮ সালের নবেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সুষ্ঠু ও সকল দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিনপিসহ সকল জোট ও দলের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন । কিন্তু বিরোধী জোটের অনমনীয়তার জন্য শেখ হাসিনার এ আন্তরিক উদ্যোগ ব্যর্থ হয়ে যায়।

১৭) বিটিভিতে জনতার মুখোমুখি : শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হয়ে বিটিভিতে সরাসরি ‘জনতার মুখোমুখি’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের প্রশ্নের জবাব দেন। এ ধরনের অনুষ্ঠান পৃথিবীর কোথাও হয়েছে কিনা জানা যায়নি ।

১৮) সংবাদ সম্মেলন : প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের সঙ্গে যেভাবে সম্মেলন করে খোলামেলা প্রশ্ন করার সুযোগ করে দেন এটিও একটি বিরল বিষয়। অনেক দেশের প্রধানমন্ত্রী কখনোই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন না ।

১৯) জিয়া পরিবাবের প্রতি সমবেদনা : দ-প্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও বেগম খালেদা জিয়াকে বিশেষ বিবেচনায় জামিনের ব্যবস্থা করেছেন। বেগম জিয়া পরিবারের দ্বিতীয় সন্তান কোকোর মৃত্যু সংবাদ পেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবনে ছুটে যান। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় প্রধানমন্ত্রীকে বাড়ির গেটে প্রায় আধা ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রেখেও ঢুকতে দেয়া হয়নি। একজন প্রধানমন্ত্রীকে এমন নির্মম অসম্মান পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। বঙ্গবন্ধুকন্যা অতীতকে ভুলে দেশের স্বার্থে বার বার একটি রাজনৈতিক, গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন। এমনকি তারেক রহমানের বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, কখনও তিনি এ পরিবারের কাছ থেকে কোন সহযোগিতা পাননি।

২০) করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ : কমনওয়েলথভুক্ত ৫৪ দেশের অনুপ্রেরণাদায়ী শীর্ষ তিন মহিলা নেতার মধ্যে স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনাভাইরাস মহামারী সাফল্যের সঙ্গে মোকাবেলার স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন ও বার্বাডোজের প্রধানমন্ত্রী মিয়া আমোর মোতলিও একই সম্মান পেয়েছেন। কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন অসাধারণ নেতৃত্ব প্রদর্শনের জন্য কমনওয়েলথের শীর্ষ তিনজন অনুপ্রেরণাদায়ী মহিলা নেতাদের অন্যতম হচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। করোনা নিয়ন্ত্রণে বিস্ময়কর সাফল্য দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার দুটোই নিম্নস্তরে। বিশ্বের ১৩০ দেশ যেখানে টিকা পায়নি সেখানে আমাদের প্রায় ৪০ লাখ মানুষ টিকা গ্রহণ করেছেন। ইতোমধ্যে দেশের জন্য প্রয়োজনীয় টিকা সংগ্রহ করে ফেলেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

২১) বিডিআর বিদ্রোহ দমন : ২০০৯ সালে দেশের বিভিন্ন জায়গায় একযোগে বিডিআর সদস্যরা বিদ্রোহ করে । এতে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ নিহত হয়েছিলেন। এর পেছনে সরকার উৎখাতের এক গভীর ষড়যন্ত্র ছিল। সেনা দফতরে প্রচন্ড অস্থিরতা এবং ক্ষোভ লক্ষ্য করা যায়। বঙ্গবন্ধু কন্যা শুধু বেগম মতিয়া চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে ক্যান্টনমেন্টে গিয়ে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে মায়ের স্নেহ দিয়ে সেনা সদস্যদের মন জয় করে ক্ষোভ নিরসন করে ফিরে আসেন। সেদিন দেশবাসী বঙ্গবন্ধুকন্যার সাহস এবং দক্ষতা দেখেছেন।

২২ ) ২০০৭ সালের ৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন : ২০০৭ সালের ৭ মে শেখ হাসিনা তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘোষিত জরুরী অবস্থা চলাকালীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা শেষে শত প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে আসেন। সে সময়ে তিনি যেন দেশে ফিরে আসতে না পারেন সে জন্য তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এক অবৈধ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে বিশ্বব্যাপী । শেখ হাসিনার দৃঢ়তা, সাহস এবং জনতার চাপে সরকার অবৈধ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয় । সেদিন যদি নিজ সিদ্ধান্তে ফিরে না আসতেন বাংলাদেশের গণতন্ত্র কবে ফিরে আসত বলা কঠিন ছিল।

২৩) রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় : রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে যেমন বিশ্বের কাছে নতুন করে মানবিক নেত্রী হিসেবে সম্মানিত হয়েছেন তেমনি বাংলাদেশকেও মর্যাদার আসনে বসিয়েছেন। যে কারণে বিশ্বে তিনি এখন ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ হিসেবে পরিচিত। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে বাংলাদেশে।

২৪) ডিজিটাল বাংলাদেশ : বাংলাদেশ এখন এগিয়ে যাচ্ছে তথ্য-প্রযুক্তির ওপর ভর করে। একটা সময় ভাবা হতো, তথ্যপ্রযুক্তি শুধু সংযোগের কাজেই ব্যবহৃত হবে। সেই প্রযুক্তি এখন উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে। স্বপ্ন দেখাচ্ছে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার। করোনাভাইরাসের এই মহামারীর সময়ে যখন মানুষের চলাচল সীমিত হয়ে পড়ে, তখন ডিজিটাল প্রযুক্তিই যোগাযোগের এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে পরিগণিত হয়। বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলেই এই ক্রান্তিকালে ডিজিটাল প্রযুক্তি ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। দেশের ১৮ হাজার ৪৩৪ সরকারী প্রতিষ্ঠান ও ৩ হাজার ৮০০ ইউনিয়নে এখন অপটিক কেবল স্থাপনের মাধ্যমে ইন্টারনেট পৌঁছে গেছে। দেশে এখন প্রায় ১১ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন।

২৫) গৃহহীন, ভূমিহীনদের বিনামূল্যে ঘর : মুজিববর্ষ উপলক্ষে ৮ লাখ ৮২ হাজার ৩৩ ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে সরকারী খরচে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দুই শতক জমির মালিকানাসহ সুদৃশ্য রঙিন টিনশেড পাকা বাড়ির স্থায়ী ঠিকানা দেয়া হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে ২৩ জানুয়ারি ঠিকানাবিহীন একদিনে প্রায় ৭০ হাজার গৃহহীন মানুষকে ঘর উপহার দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি শুধু নয়, বিশ্ব রেকর্ডও গড়েছেন মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা। দুই দিন আগেও যারা ছিলেন সম্বলহীন তারা আজ নিজ বাড়ির মালিক। মুজিববর্ষে এর চেয়ে বড় উৎসব আর কিইবা হতে পারে!

২৬) মহাকাশ বিজয় (বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১) : ২০১৮ সালে ১২ মে মধ্যরাতে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে প্রথম বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ এর সফল উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশ প্রবেশ করে মহাকাশ যুগে। স্পেসএক্সের ফ্যালকন-৯ রকেটের নতুন সংস্করণ ব্লক ফাইভ ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ প্যাড থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটকে সঙ্গে নিয়ে রওনা হয় মহাকাশের পথে। উৎক্ষেপণের সাড়ে ৩৩ মিনিটের মাথায় বঙ্গবন্ধু-১ রকেট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গা ভাসায় মহাশূন্যে। পরে ৩৬ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মহাকাশের ১১৯.১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থান নেয় দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ।

২৭) সমুদ্র বিজয় : প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সীমানা নির্ধারণে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা শুরু হয়েছিল ১৯৭৪ সালেই। ২০০৯ সালে সরকার দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র ৫ মাসের মাথায় আইনী পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে আলোচনার পর মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়ায় ২০০৯ সালের ৮ অক্টোবর সালিশী আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সরকার। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের জন্য বাংলাদেশ জার্মানির হামবুর্গভিত্তিক সমুদ্র আইনবিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে (ইটলস) মামলা দায়ের করেছিল। আর ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের মামলা দায়ের করা হয়েছিল হেগের স্থায়ী সালিশী আদালতে। ভারত ও মিয়ানমার সমদূরত্বের ভিত্তিতে সমুদ্রসীমা দাবি করায় বাংলাদেশের সাগর এলাকা মাত্র ১৩০ নটিক্যাল মাইলে সীমিত হয়ে পড়েছিল। ২০১২ সালের ১৪ মার্চ ট্রাইব্যুনাল উন্মুক্ত আদালতে মামলার দু’পক্ষসহ (বাংলাদেশ ও মিয়ানমার) সকলের উপস্থিতিতে এ বিষয়ে চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করে। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দাবি অনুযায়ী ন্যায্যতার ভিত্তিতে রায় দেয়ায় ২০০ নটিক্যাল মাইল অর্থনৈতিক এলাকা এবং তদুর্ধ মহীসোপান এলাকায় বাংলাদেশের নিরঙ্কুশ ও সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা হয়। ভারতের সঙ্গে মামলায় হেগের আদালতেও এই সীমানা প্রতিষ্ঠিত হয়।

অন্যদিকে, ৮ জুলাই ২০১৪ ভারতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে প্রদেয় রায় প্রকাশ করা হয়। যার মধ্য দিয়ে মিয়ানমারের পর ভারতের সঙ্গেও বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণ হয়। নেদারল্যান্ডসের স্থায়ী সালিশী আদালতের রায়ে বঙ্গোপসাগরের বিরোধপূর্ণ ২৫ হাজার ৬০২ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকা পায় বাংলাদেশ। বাকি ছয় হাজার ১৩৫ বর্গকিলোমিটার পেয়েছে ভারত। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে উভয় রাষ্ট্রের মধ্যে এই সমস্যা বিরাজ করছিল। আন্তর্জাতিক আইনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে তা নিষ্পত্তি হয়েছে। এই রায়ের ফলে প্রতিবেশী মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের বিষয়টি সুরাহা হওয়ায় বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের টেরিটোরিয়াল সমুদ্র, ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশে অবস্থিত সব ধরনের প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে পেরেছে। ফলে বিরোধপূর্ণ সমুদ্র এলাকার বিপুল অংশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বাংলাদেশের বাধা কেটে গেছে। গভীর সমুদ্রে প্রস্তাবিত ১০ তেল-গ্যাস ব্লকই পড়েছে বাংলাদেশের সীমানায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এবং জনকল্যাণমূলক দেশপ্রেমই এই সিদ্ধান্ত এদেশের ভৌগোলিক আয়তনের প্রায় সমান এলাকা সম্পদসহ আজ বাংলাদেশের জনগণের অধিকারে এসেছে।

২৮) বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় এবং সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন : ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই ছিল বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার ছিটমহল বিনিময়ের এক ঐতিহাসিক রাত। এই দিন মাঝরাত ছিল দুই দেশের ছিটমহলগুলোতে বসবাসরত ছিটমহলবাসীর মুক্তির রাত। এই দিন রাত ১২টার পর বাংলাদেশের মধ্যে থাকা ১১১ ছিটমহল আনুষ্ঠানিকভাবে মূল ভূখ-ের অংশ হয়ে যায়। অন্যদিকে, ভারতের মধ্যে থাকা বাংলাদেশের ৫১ ছিটমহল সে দেশের অংশ হয়ে যায়। অবসান ঘটে এগুলোর অধিবাসীদের ৪৪ বছরের অপেক্ষার। ১৯৭৪ সালের বাংলাদেশ-ভারত স্থলসীমান্ত চুক্তি এবং ২০১১ সালের প্রটোকল অনুযায়ী ১৯৪৭ সালের ভারত ভাগের ৬৮ বছর পর দুটি দেশের মধ্যকার সীমান্ত সমস্যার নিষ্পত্তি হয়। ৬৮ বছর পর ছিটমহলবাসীর সব অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

২৯) বিশ্ব শান্তির দূত : ১৯৯৯-২০০০ সময়কালে বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃতে জাতিসংঘে পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তি (সিটিবিটি) এবং পারমাণবিক অস্ত্র প্রস্তুত বিরোধী চুক্তি (এনপিটি) স্বাক্ষর ও অনুমোদন করে। ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ নির্যাতনবিরোধী সনদ অনুমোদন করে। প্রতি ১০০ বছরে একবার ‘হেগ আপিল ফর পিস’ শান্তির জন্য মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯৯ সালে ১১-১৫ মে নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে এটি অনুষ্ঠিত হয় যেখানে জাতিসংঘ মহাসচিব কফি আনান এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনাকে কফি আনান বিশ্বের শান্তির দূত হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

বাংলাদেশ পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তি (টিপিএনডব্লিউ) ২০১৭ এর ২০ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষর এবং ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর অনুমোদন দেয়। ৫০টি রাষ্ট্র অনুমোদন দেয়ার পরে ২০২১ সালের ২২ জানুয়ারি চুক্তিটি কার্যকর হয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার এবং নিষিদ্ধকরণের জন্য সব সময় সোচ্চার। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশই একমাত্র দেশ এই চুক্তি অনুমোদন করেছে। সবই হয়েছে শেখ হাসিনার আগ্রহ এবং উদ্যোগে।

৩০) ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশের সদর্পে পদার্পণ : ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশের পুরুষ-নারী উভয় দলই শক্তিশালী অবস্থানে আছে। শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ পরিকল্পনা ও সহযোগিতায় ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি বিজয়ের মধ্যে দিয়ে বাংলার ছেলেরা কুয়ালালামপুরের মাঠে ওড়াল বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা, যে পতাকা দাপটের সঙ্গে উড়ে চলেছে বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ওয়ার্ল্ড কাপ খেলছে, টি-টোয়েন্টি খেলছে, ওডিআই খেলছে, টেস্ট খেলছে। প্রথম ওয়ার্ল্ড কাপে হারিয়েছে পাকিস্তানকে, পর্যায়ক্রমে হারিয়েছে শক্তিধর সকল দলকে। এখন বাংলাদেশ বিশ্ব ক্রিকেটে এক শক্তিশালী দল হিসেবে পরিগণিত। শুধু ক্রিকেট নয়, শেখ হাসিনার পৃষ্ঠপোষকতায় ক্রীড়ার সব ক্ষেত্রে এখন সুবাতাস বইছে।

৩১) কর্মী প্রাণ শেখ হাসিনা : ইতিহাসের জঘন্যতম নৃশংস হত্যাকা- হচ্ছে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার হত্যাকা-। মহান আল্লাহ বঙ্গবন্ধুকন্যাকে নিজ হাতে নতুন জীবন দিয়েছেন। এমন হামলায় শারীরিক এবং মানসিকভাবে পর্যুদস্ত থাকার কথা। শারীরিকভাবে আহত হয়েও বাসায় এসেই নেতা-কর্মীদের খোঁজ নিচ্ছেন, চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন, প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছেন। নিজের কথা এক বারও না ভেবে সারাক্ষণ নেতা-কর্মীদের খোঁজখবর রাখেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন– সেই তো সত্যিকার অভিভাবক তিনি সব সময় নেতা-কর্মীদের খোঁজখবর রাখেন ।

৩২) যানজট নিরসনে পদক্ষেপ : ঢাকায় একটা সময় ছিল মানিক মিয়া এ্যাভিনিউ, প্রেসক্লাবসহ বড় বড় রাস্তায় জনসভা হতো তাতে সারাদিন শহরে যানজট লেগে থাকত। শেখ হাসিনা ১৯৯৬ এ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করে এসব সড়কে জনসভা বন্ধ করে পল্টনসহ ঢাকার কিছু মাঠ সভার জন্য নির্ধারণ করে দিলেন।

৩৩) মুক্তিযুদ্ধের সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করা : তিনি সব সময় উদ্যোগ গ্রহণ করেন মুক্তিযুদ্ধের সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ রাখার। এ রকম একটা উদ্যোগ ছিল ২০০৫ সালের ৩০ এপ্রিল পেশাজীবীদের মাধ্যমে। কিন্তু দুঃসময়ে অনেকের চেহারা নতুন করে বোঝা যায় যখন ঐক্যের কথা ভুলে যান।

৩৪) বিজয় মিছিল নিষেধ : পাল্টাপাল্টি সংঘাত এক সময় থামাতে হয়। এ রকম উদ্যোগও নিয়েছেন শেখ হাসিনা। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর ৩০ ডিসেম্বর তিনি ঘোষণা দিলেন, বাংলাদেশের কোথাও বিজয় মিছিল হবে না, কোন সংঘাত হবে না । আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দেশের স্বার্থে নেত্রীর সেই নির্দেশ পালন করেছেন। অথচ বিএনপি-জামাতের গুণ্ডারা ২০০১ এর পরে ঘোটা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নৃশংসভাবে হত্যা করেছে, ধর্ষণ করেছে, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে, এলাকাছাড়া করেছে, অসংখ্য মানুষকে নির্যাতন করেছে। তারা পাঁচ বছরে (২০০১-২০০৬) প্রায় ২৬ হাজার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছিল। নেত্রী এ রকম নির্দেশ না দিলে সংঘাতের পুনরাবৃতি হওয়ায়ই স্বাভাবিক ছিল।

৩৪) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি : কানাডা প্রবাসী দুই বাঙালী রফিক-সালামের উদ্যোগে এবং শেখ হাসিনার বিশেষ কর্মতৎপরতায় ১৯৯৯ সালের ১৭ নবেম্বর ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে ১৮৮ দেশের সমর্থনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্য দেশসমূহ যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালন করে আসছে। ২০১০ সালের ২১ অক্টোবর জাতিসংঘের ৬৫তম অধিবেশনে প্রস্তাবটি পাস হয়।

৩৫) হেফাজতের অভ্যুত্থান পরিকল্পনা প্রতিহত : ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধ এবং শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছিল। বিএনপি-জামায়াতের সমর্থনে তারা একটা অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্র করেছিল। শেখ হাসিনার সরকার রক্তপাতহীনভাবে সংঘাত এড়িয়ে তাদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেয়। সেদিন সরকার ব্যর্থ হলে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির সম্ভাবনা ছিল।

৩৬) জঙ্গী দমন : ২০০১ এর পর থেকে বিএনপি-জামায়াতের মদদে দেশে জঙ্গী উত্থান শুরু হয় যাতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং নিরীহ মানুষের জীবনপাত হয়। দেশে এক অরাজক পরিস্থিতির উদ্ভব হয় এবং জনজীবন বিশেষ করে হুমায়ুন আযাদ-শামসুর রাহমানের মতো মুক্তচিন্তার মানুষদের জীবন নিরাপত্তাহীনতায় দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর কঠোরভাবে জঙ্গী দমন করেন যেখানে অনেক উন্নত দেশ ব্যর্থ হয়েছে। এতে বাংলাদেশে জনজীবনে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

৩৭) মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন : বাংলাদেশের চিকিৎসকদের প্রায় তিন দশকের দাবি ছিল দেশে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের। অতীতে অনেক সরকার কথা দিয়েছে কিন্তু বাস্তবায়ন করেনি। শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালের ৩০ এপ্রিল বাংলাদেশে প্রথম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেন। তাঁর উদ্যোগেই বাংলাদেশে এখন পাঁচটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সঠিকভাবে পরিচালিত হলে বাংলাদেশের মেডিক্যাল শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হবে।

৩৮) কমিউনিটি ক্লিনিক : বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগণের দোরগোড়ায় মানসম্মত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে স্থাপিত কমিউনিটি ক্লিনিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তাপ্রসূত একটি যুগান্তকারী প্রবর্তন। প্রতি ৬ হাজার জনগণের জন্য এই ক্লিনিক ১১ ধরনের সেবা প্রদান করে এবং ৩১ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে প্রদান করে। এখন দেশে প্রায় ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক সেবা দিয়ে যাচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা সরকারের প্রান্তিক জনগণকে সেবা প্রদানের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত , যা দেশে-বিদেশে প্রশংসিত এবং অনুকরণীয়।

৩৯) ছাত্রনেতাদের হাতে বই-খাতা-কলম তুলে দেন : ‘আগে শিক্ষা পরে রাজনীতি’-শেখ হাসিনা এ নীতিতে বিশ্বাস করেন। ১৯৭৫ এর পর জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়া ছাত্রদের শিক্ষার পরিবর্তে হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে, ছাত্রদের ব্যবহার করেছে। যখন শিক্ষা প্রাঙ্গণে অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিল, ছাত্রদের লাশ পড়ত যখন তখন, সে সময় শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের প্রতি সম্মেলনে ছাত্রদের হাতে বই-খাতা-কলম তুলে দেন তরুণ প্রজন্মকে সঠিক পথে রাখার জন্য। শেখ হাসিনা এভাবে অসংখ্য কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে চলেছেন দেশকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। গত ১২ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি আত্মমর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আর্থ-সামাজিক এবং অবকাঠামো খাতে বাংলাদেশের বিস্ময়কর উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। দ্য ইকোনমিস্ট-এর ২০২০ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী ৬৬ উদীয়মান সবল অর্থনীতির দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৯ম। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৪তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।

১৯৮১ সালের ১৭ মে বুকের ভেতর কষ্টের পাথর বেঁধে তিনি পা রেখেছিলেন তাঁরই স্নেহময়ী প্রাণপ্রিয় পিতা-মাতা, ভাই-ভ্রাতৃবধূসহ নিকটাত্মীয়ের রক্তে ভেজা বাংলার মাটিতে, নিজের জীবনের স্বামী-সন্তান-সংসারের অবশিষ্ট সুখটুকু পেছনে ফেলে কেবল পিতার অসমাপ্ত কাজটুকু সম্পন্ন করতে। সেদিনের গণসংবর্ধনায় ভাষণদানকালে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ঘোষিত দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচী বাস্তবায়ন ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আমি জীবন উৎসর্গ করে দিতে চাই। আমার আর কিছু চাওয়া-পাওয়ার নেই। সব হারিয়ে আমি এসেছি আপনাদের পাশে থেকে বাংলার মানুষের মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেয়ার জন্য।’ তিনি সেদিন বাংলার মানুষকে যে কথা দিয়েছিলেন তা তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলেছেন। সেদিন তিনি কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন না করলে এত দিনে দেশ পুরোপুরি পাকিস্তানের মতো স্বৈরাচারী, বিশৃঙ্খল ও সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত হতো। শেখ হাসিনা সে অবস্থা থেকে বাংলাদেশেকে রক্ষা করেছেন এবং বাংলার মানুষকে মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় নতুন করে অভিষিক্ত করেছেন। তিনি দেশে বার বার আদর্শ রাজনৈতিক-সামাজিক সংস্কৃতি চালু করার চেষ্টা করেছেন। তিনি সন্ত্রাস-দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন কিন্তু বিশৃঙ্খলাকারীদের দল থেকে বের করে দিলে অন্য দল তাদের লুফে নেয়। তাঁকে বার বার হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তিনি বার বার আরও উজ্জ্বল হয়ে, শাণিত হয়ে ফিরে এসেছেন জনগণের মাঝে। ভয় বলে তাঁর সাহসী হৃদয়ে কিছু নেই।

বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে আমরা শেখ হাসিনাকে পেয়েছি। দেশের সীমানা পেরিয়ে তিনি এখন আন্তর্জাতিক বিশ্বে নন্দিত, মেধাবী, অভিজ্ঞ, সৎ, কর্মঠ, জনপ্রিয় বিশ্বনেতা। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য, বাংলাদেশের মহা উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার জন্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নেই। তাই দল-মত নির্বিশেষে দেশের স্বার্থে, আগামী প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যতের স্বার্থে শেখ হাসিনার পাশে শক্তভাবে দাঁড়ানো সবার দায়িত্ব। শেখ হাসিনা সুস্থ থাকুন, দীর্ঘজীবী হোন।

ডা: কামরুল ইসলাম

লেখক : সাবেক উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে