ডিজিটাল বাণিজ্য খাতের জাতীয় সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ই-ক্যাবের ২০২২-২৪ দ্বি-বার্ষিক কার্য নির্বাহী কমিটির নির্বাচন আগামী ১৮ জুন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। করোনার অভিঘাতে জাতীয় সঙ্কট মোকাবেলায় প্রশংসিত উদ্যোগ গ্রহণের কারণে এবারের নির্বাচনকে ঘিরে সদস্যদের মধ্যে রয়েছে নির্বাচনী আমেজ। মনোনয়ন ফি অর্ধেকে নামিয়ে আনায় এই আমেজ বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। ই-ক্যাব সৃষ্টির ৯ বছর পর ই-ক্যাবে বইছে নির্বাচনী আমেজ। বেশ ক’জন প্রার্থী এরইমধ্যে সংগ্রহ করেছেন মনোনয়নপত্র।
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতের উন্নয়ন, সমস্যা নিরসন ও কল্যাণের লক্ষ্য নিয়ে একটি বানিজ্যিক সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৪ সালে ই-ক্যাব তাদের যাত্রা শুরু করে।
উদ্যোক্তা এবং সংগঠক হিসেবে সুপরিচিত আব্দুল আজিজ ই-ক্যাবের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
অধিকার টিভি’র অনলাইনকে আব্দুল আজিজ বলেন, ‘ আমি একটি ছোট ই-কমার্স, যাচাই ডট কম -এর প্রতিষ্ঠাতা এবং ই ক্যাব -এর সদস্য। আমি একজন ছোট উদ্যোক্তা হিসেবে সৎভাবে ই-কমার্স পরিচালিত করতে গিয়ে নানামুখী প্রতিকূলতার এবং সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি। বারবার স্বপ্ন ভেঙ্গে হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছি, কিন্তু প্রতিষ্ঠানটিকে বাঁচিয়ে রাখার যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি। কখনো হাল ছাড়িনি। বার বার মনে হয়েছে, যে যুদ্ধটা একা চালিয়ে যাচ্ছি, যদি পাশে কাউকে পাই! যিনি বা যেই সংগঠন বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সঠিক পরামর্শ দিবেন এবং সাহস দিয়ে যুদ্ধ জয়ের জন্য সহযোগিতা করবেন। আমি যেহেতু ছোট পরিসরে ই-কমার্স পরিচালনা করছি, তাই কিছু সমস্যা চিহ্নিত করতে পেরেছি। ই-কমার্স সেক্টরের সকলের চিহ্নিত সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমি ই-ক্যাবের সকল সদস্য প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে এবং ই-ক্যাব সদস্যদের স্বার্থের জন্য আমি কাজ করার সুযোগ চাই। এই জন্য ই-ক্যাবের সম্মানিত সকল সদস্য বৃন্দের ভালবাসা, দোয়া এবং সমর্থন প্রত্যাশা করছি।’
আব্দুল আজিজ একজন সফল ব্যক্তিত্ব। তার জন্ম নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়নের মৌলভিপাড়া গ্রামে। বাবা সরকারি ব্যাংকে চাকরিজীবী হওয়ার সুবাদে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্কুলে তাকে পড়ালেখা করতে হয়েছে। আব্দুল আজিজ শিক্ষা জীবনে এসএসসি পাশের পর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং, বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং, এমবিএ এবং আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি গ্রহন করেছেন। আব্দুল আজিজ ছোট আকারে একটি গার্মেন্টস বায়িং হাউজ দিয়ে ব্যাবসায়ি হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। কিন্তু ওই ব্যবসায়ের দায়িত্বে নিয়োজিত দক্ষ জনশক্তির অভাবে কর্মজীবনের শুরুতে তিনি বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছিলেন। ইতিমধ্যে সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে মেধাতালিকার ভিত্তিতে বাংলাদেশ সরকারের রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগে সরকারি চাকরির সুযোগ পেয়ে তিনি রেলওয়ের চট্রগাম বিভাগে যোগদান করেন। রেলওয়েতে যোগদানের পরও নিজের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের পূর্বের উদ্যোগের ব্যর্থতা তাকে কুড়েকুড়ে খাচ্ছিলো। আব্দুল আজিজ পরিষ্কার বুঝতে পেরেছিলেন, অনেক ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান দক্ষ জনশক্তির অভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং এই কারণে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই সরকারি চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সাহসী সিদ্ধান্ত তিনি নেন। দেশের কল্যাণে এবং অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখার সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছিলেন। বৈদেশিক রিজার্ভ রক্ষার জন্য এবং বিদেশী দক্ষ জনশক্তির উপর নির্ভরশীলতা কিছুটা কমিয়ে আনতে তিনি দক্ষ জনশক্তি তৈরি করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন । এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন টেকনোলজি (এনআইএফটি) নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করে তিনি এনআইএফটিতে গার্মেন্টস এবং টেক্সটাইল বিষয়ে সার্টিফিকেট, ডিপ্লোমা, এবং অনার্স এবং এমবিএ প্রোগ্রাম চালু করেন।
আব্দুল আজিজ ই-কমার্স সেক্টরে বিনিয়োগের পাশাপাশি টেক্সটাইল এবং গার্মেন্টস সেক্টরের পাশাপাশি বিনিয়োগ করেন অটোমোবাইল, আমিষ ব্র্যান্ডের এগ্রো খামার, সফটওয়্যার কোম্পানি, টেস্ট্রি এবং সতেজ নামে আলাদা দুটি অর্গানিক এবং প্রসেসিং ফুড ব্র্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজ, মেট্রো সুপারশপ এবং রিটেইল বিজনেস, মিডিয়া, লজিস্টিকস কোম্পানি এবং আবাসন খাতের ব্যবসায়।
এর পাশাপাশি আব্দুল আজিজ ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এর মধ্যে অন্যতম সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (এনআইইটি), ন্যাশনাল প্রফেশনাল ইনস্টিটিউটের (এনপিআই), বিজিআইএফটি ইনস্টিটিউট অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (বিআইএসটি), ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল টেকনোলজি (এনআইএমটি), অগ্রনী মডেল স্কুল এন্ড কলেজ, ভাউয়াল গাজীপুর মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট (বিজিএমআই)।
আব্দুল আজিজ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধিভূক্ত প্রতিষ্ঠানের সংগঠনের সদস্যদের অধিকার আদায়ের জন্য ”টেকনিক্যাল এডুকেশন কন্সোর্টিয়াম অব বাংলাদেশ (টেকবিডি)” এর কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতাদের অধিকার আদায়ের জন্য প্রতিষ্ঠিত সংগঠন ”প্রফেশনাল ইনস্টিটিউট এসোসিয়েশন অব ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (PIANU)” এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন করছেন।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের জন্য ডিজিটাল যুদ্ধের সৈনিক হিসেবে ভূমিকা রাখতে প্রতিষ্ঠা করেন ‘যাচাই.কম’।
ডিজিটাল কমার্সকে বাণিজ্যখাত হিসেবে গড়ে তুলতে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই মন্তব্য করে ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল আজিজ বলেন, যেকোনো খাত গড়ে তুলতে বাণিজ্যিক সংগঠন অসাধারণ ভূমিকা পালন করে। আর ডিজিটাল শিল্পখাত প্রতিষ্ঠায় ই-ক্যাবের ভূমিকা ও গুরুত্ব অনস্বীকার্য বলে আমি মনে করি। ই-ক্যাবের আসন্ন নির্বাচনে ই-ক্যাব সদস্যদের সমর্থন এবং সহযোগিতা পেলে সদস্যদের অধিকার আদায়ের জন্য তাদের পক্ষে তাদের কথাগুলোই বলতে চাই। তিনি আরো বলেন, ই-ক্যাবের সাংগঠনিক শক্তিকে আরো সুদৃঢ় করার পাশাপাশি ই-কমার্স খাতকে জাতীয় অর্থনীতির মূলধারায় প্রতিষ্ঠিত করতে আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাই। আমি কথা দিচ্ছি ইনশাল্লাহ সদস্যদের নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং কণ্ঠস্বর হিসেবে নিজেকে সবসময় নিয়োজিত রাখবো।।’