গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে আগামীকাল ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী প্রাচীন এই রাজনৈতিক দলের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ২৩ জুন। নানা ঘাত-প্রতিঘাত, চড়াই-উতরাই ও সুদীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে আজকের এই অবস্থানে উপনীত হয়েছে আওয়ামী লীগ। দীর্ঘ ৭২ বছরে দলটি অনেক ঐতিহ্য-গৌরব স্থাপনে সক্ষম হয়েছে।
পশ্চাৎপদ ও ভ্রান্ত দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে জন্ম নেওয়া পাকিস্তানের অধীনে থাকা পূর্ব বাংলার জনগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরনো ঢাকার কে এন দাস লেনের ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে এ দলের আত্মপ্রকাশ ঘটলেও পরে ১৯৫৫ সালে শুধু আওয়ামী লীগ নাম নিয়ে অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করে অসাম্প্রদায়িক সংঘঠন হিসেবে বিকাশ লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী এই দলটি বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে গণমানুষের সংগঠনে পরিণত হয়েছে।
৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বিজয়ের পথ ধরে ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রাম নিয়ে দলটি অগ্রসর হয়। ৬৬’র ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচনে বিপুল বিজয় ও ৭১-এর স্বাধীনতার সংগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই গড়ে উঠে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে ৭১ -এ সংগঠিত মহান মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব দেয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আওয়ামী লীগ প্রথমবারের মতো সরকার গঠন করে। পাকিস্তানি শাসন আমলে এবং স্বাধীনতার পর ৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী দীর্ঘ সময় দেশে ক্ষমতায় থাকা সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সব ধরনের গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছে ঐতিহ্যবাহী দলটি।
এই সুদীর্ঘ পথ পরিক্রমায় আওয়ামী লীগকে অনেক প্রতিকুল পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। অনেক চড়াই-উতরাই এবং ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে এগোতে হয়েছে। কখনও নেতৃত্ব শূন্যতা, কখনও দমন-পীড়নের মুখে পড়তে হয়েছে দলটিকে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা এবং ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর নেতৃত্ব শূন্যতায় পড়ে আওয়ামী লীগ। এরপর দলের চরম ক্রান্তিকালে ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে শক্ত হাতে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাঙালি জাতির হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য এক নবতর সংগ্রামের পথে যাত্রা শুরু করে আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে মুছে ফেলার ব্যার্থ চেষ্টা হলেও দীর্ঘ একুশ বছর লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটির প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জয়ী হয়ে ২৩ জুন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আবার ঐক্যবদ্ধ হয়। প্রায় চার দশক ধরে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পরিচালিত হচ্ছে। এই সময়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি চার বার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পেরেছে আওয়ামী লীগ। তবে প্রতিষ্ঠার ৭১ বছরের মধ্যে প্রায় ৫০ বছরই আওয়ামী লীগকে থাকতে হয়েছে রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে, রাজপথে, আন্দোলন-সংগ্রামে।
২০০১ এবং ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পর আরেক দফা বিপর্যয় কাটিয়ে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিন-চতুর্থাংশ আসনে বিজয়ী হয়ে আবার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায় আওয়ামী লীগ। পরবর্তী সময়ে ২০১৪ সালের ৫ জানুযারি এবং ২০১৮-এর ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা তিন মেয়াদে সরকার পরিচালনা করাসহ মোট চারবার সরকার গঠন করে দলটি।
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতে যা রয়েছে
করোনা মহামারির কারণে দিবসটি পালনের জন্য আওয়ামী লীগ সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ২২ জুন দলটির পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। কর্মসূচির মধ্যে ২৩ জুন সূর্য উদয়ের সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা।
সকাল ৯টায় ধানমন্ডি বত্রিশস্থ ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করবে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিকেল ৪টায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভায় যুক্ত থাকবেন।
টুঙ্গিপাড়ার কর্মসূচি
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন ২৩ জুন সকাল সাড়ে ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের একটি প্রতিনিধি দল শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করবেন। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক এস. এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম এমপি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী, ইকবাল হোসেন অপু এমপি, সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম উপস্থিত থাকবেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার গৌরবোজ্জ্বল ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনসহ সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণের পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে যথাযথ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সকল জেলা, উপজেলাসহ সকল স্তরের নেতাকর্মী, সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।