২৫ মার্চ মানবসভ্যতার ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত হত্যাযজ্ঞের দিন। নিরীহ-নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বর্বরোচিত গণহত্যা চালানোর এক ভয়াল স্মৃতির কালরাত এই ২৫ মার্চ। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে রচিত হয়েছিল বিশ্বের নৃশংসতম গণহত্যার এক কালো অধ্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইটে’র নামে মুক্তিকামী বাঙালি জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন শুরু হয় এই রাতে। ২৫ মার্চ রাতের নির্বিচার গণহত্যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে ‘কালরাত’ নামেও পরিচিত। ২৫ মার্চকে ‘জাতীয় গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের জন্য ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে প্রস্তাব পাস হয়। সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির গ্রীন রোডের ক্যাম্পাস অডিটোরিয়ামে আজ শনিবার (২৫ মার্চ) বিকেলে ২৫ মার্চের গণহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে এসইউ আয়োজিত এক স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভায় বক্তারা এ সব কথা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে ২৫ মার্চের গণহত্যা নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. মো: আবুল বাশার, উপ-উপাচার্য প্রফেসর শামীম আরা হাসান, প্রাক্তন ট্রেজারার ও ব্যবসায় প্রশাসনের প্রফেসর মো: আল-আমিন মোল্লা, কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. এম এ মাবুদ, ব্যবসায় অনুষদের ডিন প্রফেসর আবুল কালাম ও রেজিস্ট্রার এস, এম, নূরুল হুদা। অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ১১ নম্বর সেক্টরের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী পরিচালক (অব:) খন্দকার মোখলেসুর রহমান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক কাজী জুলকারনাইন সুলতান আলম।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি উপাচার্য প্রফেসর ড. মো: আবুল বাশার বলেন, বাঙালি জাতির জীবনে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ এক বিভীষিকাময় রাত নেমে এসেছিল। মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পূর্ব পরিকল্পিত অপারেশন সার্চ লাইটের নীলনকশা অনুযায়ী বাঙালী জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নিরীহ-নিরস্ত্র বাঙালীদের ওপর অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে রচিত হয়েছিল বিশ্বের নৃশংসতম গণহত্যার এক কালো অধ্যায়। তারপর নয় মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, যা এ বছরই ৫২ বছর পূর্ণ করল।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি উপ-উপাচার্য প্রফেসর শামীম আরা হাসান বলেন, জাতি আজ মর্মস্পর্শী বেদনার সাথে স্মরণ করছে ভয়াবহ কালরাত্রি ২৫ শে মার্চকে। যেদিন পাক সেনারা নির্দয়ভাবে অপারেশন সার্চলাইট শুরু করেছিল যেটা ইতিহাসের এক জঘন্যতম অধ্যায়, যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল বাঙালি জাতির মেরুদন্ডকে ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য। এই হত্যাযজ্ঞ করা হয়েছিল শুধু সাধারণ দেশপ্রেমিক বেসামরিক নাগরিকদের মারার উদ্দেশ্যে তা নয়, বরং সমগ্র জাতিকে ভীতসন্ত্রস্ত করে বাংলাদেশের আশা-আকাঙ্ক্ষা নিশ্চিহ্ন করাই ছিল মূল লক্ষ্য। তিনি আরও বলেন, বাঙালি জাতিকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে সে রাতে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস, পুলিশ, ছাত্র-শিক্ষকসহ ঢাকা শহরের হাজার হাজার সাধারণ মানুষকে। বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীদের নির্বিচারে হত্যা করাই ছিল গণহত্যার উদ্দেশ্য।
প্রফেসর মো: আল-আমিন মোল্লা ২৫ মার্চের রাতে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে বলেন, আমরা যদি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারন করতে পারি তাহলে দেশকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারবো।
প্রফেসর আবুল কালাম রাজারবাগ পুলিশ লাইনে সুইপার ও তৎকালীন সময়ে মেয়েদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা তুলে ধরে ২৫ মার্চের কাল রাতের ঘটনাবলীর স্মৃতিচারণ করেন।
রেজিস্ট্রার এস, এম, নূরুল হুদা বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বাঙালি জাতির জীবনে এক ভয়াল বিভীষিকাময় রাত নেমে এসেছিল। মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পূর্ব পরিকল্পিত অপারেশন সার্চ লাইটের নীলনকশা অনুযায়ী বাঙালী জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নিরস্ত্র বাঙালীদের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাঙালীর স্বাধীনতার আকাংখা মুছে দেয়ার চেষ্টায় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যা চালিয়ে বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী যে সশস্ত্র অভিযান পরিচালনা করে, তারই নাম অপারেশন সার্চলাইট।