ফরিদপুরের ভাঙ্গা সদরের কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি কৃষক বন্ধুদের সমন্বয়ে কৃষি সম্মেলন ও কৃষি উপকরণ বিতরণ করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ, প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলা একাডেমি পুরষ্কারপ্রাপ্ত বঙ্গবন্ধু গবেষক সুভাষ সিংহ রায়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো: মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
সভাপতির বক্তব্যে যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেন, আমাদের যুবসমাজের একটা বিশাল জায়গা জুরে রয়েছে আমাদের প্রিয় কৃষক ভাইয়েরা। যুবলীগেরও একটা বিশাল অংশের নেতা-কর্মীরা কিন্তু কৃষক। বিশেষ করে আমাদের ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের বহু নেতা-কর্মীরা কিন্তু প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির সাথে সম্পৃক্ত। কাজেই আমাদের কৃষক ভাইদের বাদ দিয়ে আমাদের সুবর্ণজয়ন্তীর কোন কর্মযজ্ঞ, কোন কর্মসূচি অথবা কার্যক্রম সার্থকতা অর্জন করতে পারে না। তাই বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সুবর্ণজয়ন্তীর এই বছর আমরা কৃষক ভাইদে জন্য উৎসর্গ করছি। আমি মনে করি কৃষি এবং শিক্ষকতা সর্বোচ্চ সম্মানজনক পেশা। কৃষি অত্যন্ত সৎ একটা পেশাও বটে। যুব সমাজের সকলের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, বেকার সমস্যা সমাধানে ব্যবসা বা চাকুরীর পিছনে না দৌড়াইয়া, কৃষি ক্ষেত্রে আপনারা আত্মনিয়োগ এবং মনোনিবেশ করতে পারেন। কারণ কৃষিই সবচেয়ে সম্ভাবনাময় একটা ক্ষেত্র। আমি যুবসমাজকে আহ্বান জানাবো এই সৎ পেশায় আত্মনিয়োগ করতে। বঙ্গবন্ধুকন্যার ২০৪১ সালের যেই ভীষণ, একটা সুখী-সমৃদ্ধ, মর্যাদাশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ, সেই ভীষণ বাস্তবায়ন আমাদের কৃষকরাই বৈপ্লবিক ভূমিকা রাখবে। জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে এদেশের কৃষকেরা লাঙ্গল ফেলে অস্ত্র হাতে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুরও অগাধ আত্মবিশ্বাস ছিল বাংলার কৃষক ভাইদের প্রতি। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ খাদ্য ঘাটতির দেশ থেকে খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। করোনার নির্মম আঘাতে বিশ্ব যখন পর্যদস্তু, ঘোর অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে, তখন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে দেশে খাদ্য ঘাটতি হয় নাই। এই কৃতিত্ব ও গৌরব আমাদের কৃষক ভাইদের। তিনি বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন সারের দাবিতে আন্দোলন করলে বিএনপি ১৮ জন কৃষককে গুলি করে হত্যা করে। এছাড়াও কানসার্টে বিদ্যুতের দাবিতে জনগণ আন্দোলন করলে সেখানেও বেশ কয়েকজন মানুষকে গুলি করে হত্যা করে বিএনপি-জামাত সরকার। তাদের হাত কৃষকের রক্তে রঞ্জিত। তারা এখন পাগল হয়ে পদযাত্রার নামে পথে পথে ঘুরছে। তারা তো ক্ষমতায় ছিল একাধিকবার। এদেশের গরীব মানুষের সাথে প্রতারণা, নিপীড়ন আর বঞ্চনা ছাড়া কিছু করতে পারে নাই। তিনি আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কৃষি সম্বন্ধে দুইটি স্লোগান আমাদের বুকে ধারণ করতে হবে (১) আমার বাড়ি আমার খামার (২) এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। এই স্লোগান দুটি আমাদের প্রেরণাতে রূপান্তরিত করতে হবে, সেই প্রেরণা এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। একই সাথে সমগ্র দেশব্যাপী কৃষি সম্মেলন ও কৃষি উপকরণ বিতরণ কর্মসূচির শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করছি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, আজকে যুবলীগের কৃষি সম্মেলন ও কৃষি উপকরণ বিতরণ অনুষ্ঠানে বলতে চাই-আজকের এই যুবজাগরণে যে জমায়েত, গলার যে জোড় তাতে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে এই দেশে মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ, রাজাকারদের উত্থান বাংলার যুবসমাজ, তরুণ সমাজ, এই প্রজন্ম রুখবেই রুখবে। আজকে দেশবিরোধী বিএনপি-জামাত যে ষড়যন্ত্র করছে তাতে তারা কোন দিনই সফল হবে না। তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার চলার পথ কখনও সহজ ছিলনা। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। সকল ষড়যন্ত্রকে পিছনে ফেলে তিনি এই বাংলার মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। আগামী দিনে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে এই যুবকদেরকেই কাজ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, শুধু কর্মসূচি নিলেই হয় না, সেটাকে জনপ্রিয় করে গড়ে তুলতে হয়। ৬ দফার আগেও অনেক দফা ছিল কিন্তু সবচেয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল ৬ দফা। কারণ ৬ দফার সাথে মানুষের চাহিদার সমন্বয় ঘটেছিল। তেমনি বর্তমানে শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলদেশও মানুষের মুখে মুখে। বর্তমানে মানুষ কাজের আরও সুবিধা ভোগ করতে চায়। আর স্মার্ট বাংলাদেশের মাধ্যমে তা করা সম্ভব।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুভাষ সিংহ রায় বলেন, কাদের সময় বাংলাদেশের মানুষের উন্নয়ন ঘটেছে। সেটা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। আপনারা গণমাধ্যমে দেখেছেন কৃষকবন্ধু শেখ হাসিনা তার গণভবন কৃষি খামারে পরিণত করেছেন। আর উচ্চ আদালতের নির্দেশে যখন বেগম খালেদা জিয়াকে তার দখলকৃত বাড়ি থেকে বের হতে হয় তখন আপনারা গণমাধ্যমে কি কি দেখেছিলেন তা মুখে বলা যায় না। এক নেত্রীর বাড়িতে কি পাওয়া যায় তা মুখে বলা যায় না অপরদিকে আর একজন নেত্রীর গণভবন কৃষি খামারে পরিণত হয়। এই পার্থক্যের জায়গাটি একদিনে তৈরি হয়নি। শেখ হাসিনা তার মহান পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে শিক্ষা পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধু যেমন সবার আগে কৃষকের কথা ভাবতেন শেখ হাসিনাও তার ভাবনার অগ্রভাগে কৃষককে রেখেছেন।
সঞ্চালকের বক্তব্যে যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো: মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ একটি মানবিক যুবলীগ। আপনারা লক্ষ্য করেছেন এই করোনার সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল যুবলীগ। শীতের সময় শীতবস্ত্র নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল, ধান কাটার সময় অসহায় কৃষকের ধান কেটে ঘরে তুলে দিয়েছে যুবলীগ। আজ আপনাদের মাঝে এসেছি আমাদের কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশের কৃষকের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। যে কৃষকের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন, সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন, তারই ধারাবাহিকতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশে আজকে কৃষক বন্ধুদের মাঝে কৃষি উপকরণ বিতরণ করতে এসেছি। তিনি আরও বলেন, আপনারা জানেন সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের ফলে বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি খাদ্য সংকটেও পতিত হয়েছে। বাংলাদেশ যেন খাদ্য সংকটে না পড়ে একারণে আমাদের প্রিয় নেত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কৃষি কাজের উপর অধিক জোড় দিয়েছেন। তিনি বলেছেন এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। আর এ কারণেই কৃষির উপর অধিক জোড় দিয়েছেন। যুবসমাজকে তাগিদ দিয়েছেন কৃষি কাজে অধিকভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য। তিনি আরও বলেন, আমি যুবলীগের নেতা-কর্মীদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, যার যে টুকু জমি আছে, বঙ্গবন্ধুকন্যার নির্দেশে ফসল ফলান। খাদ্য ঘাটতি থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করুন। গ্রাম থেকে ইউনিয়ন, ইউনিয়ন থেকে উপজেলা, উপজেলা থেকে জেলায় সমগ্র বাংলাদেশে কৃষকের পাশে থাকবে যুবলীগ।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন এমপি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সুব্রত পাল, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু মুনির মো: শহিদুল হক চৌধুরী রাসেল, সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিপ্লব মুস্তাফিজ, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. মো: হেমায়েত উদ্দিন মোল্লা।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সোহেল উদ্দিন, ডা: খালেদ শওকত আলী, মো: রফিকুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার মৃনাল কান্তি জোদ্দার, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা: হেলাল উদ্দিন, মোঃ সাইফুর রহমান সোহাগ, মো: সোহেল পারভেজ, মশিউর রহমান চপল, ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন বাবুল, দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইন উদ্দিন রানা, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক মো: ইসমাইল হোসেন, দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এইচ এম রেজাউল করিম রেজা, কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী, দপ্তর সম্পাদক মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মো: সাদ্দাম হোসেন পাভেল, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পাদক মো: শামছুল আলম অনিক, উপ-দপ্তর সম্পাদক মো: দেলোয়ার হোসেন শাহজাদা, উপ-অর্থ সম্পাদক সরিফুল ইসলাম দুর্জয়, উপ-শিক্ষা প্রশিক্ষণ ও পাঠাগার সম্পাদক কাজী খালিদ আল মাহমুদ টুকু, উপ-ক্রীড়া সম্পাদক মো: আবদুর রহমান, উপ-পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মো: সামছুল ইসলাম পাটোয়ারী, উপ-কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক মোল্লা রওশন জামির রানা, উপ-ধর্ম সম্পাদক হরে কৃষ্ণ বৈদ্যসহ কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা যুবলীগের নেতৃবৃন্দ।