বর্তমানে দেশে অনুমোদন পাওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১১২টি। অনুমোদিত এ সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সময়োপযোগী আধুনিক শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে ভূমিকা রাখছে। সেই সাথে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা বর্তমানে দেশে ও বিদেশে সরকারি-বেসরকারি ও মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে সাফল্যের সাথে কাজ করছে এবং তারা উদ্যোক্তা হিসেবেও সফল । এ ছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উচ্চশিক্ষায় বিদেশনির্ভরতা কমাতে ও সেশন জট নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে এবং ব্রেন ড্রেইন ঠেকিয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে দেশে বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিচালনায় বড় পরিবর্তন আনতে চায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এ জন্য পরিচালনা পর্ষদে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাইদের অর্থাৎ প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংযুক্ত করার আইন করার উদ্যোগ নিয়েছে ইউজিসি। আইনটি পাস হলে প্রথমবারের মতো অ্যালামনাইরা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় ভূমিকা রাখার সুযোগ পাবেন।
সম্প্রতি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। প্রস্তাবিত খসড়া আইনে ঢাকা ও অন্যান্য সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য ৮ কোটি এবং জেলা শহরের জন্য ৫ কোটি টাকার তহবিল সম্পূর্ণরূপে দায়মুক্ত রাখার কথা বলা হয়েছে। বর্তমান আইনে ঢাকা শহরের জন্য ৫ কোটি, অন্যান্য মেট্রোপলিটন সিটির জন্য ৩ কোটি এবং জেলা শহরের জন্য ২ কোটি টাকার সংরক্ষিত তহবিল রাখার বিধান রয়েছে। প্রস্তাবিত খসড়া আইনে আরও বলা হয়েছে, কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এমন কোনো নামে স্থাপন করা যাবে না, যে নামে স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় বা বিদেশে কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় ইতিপূর্বে স্থাপিত হয়ে বহাল ছিল বা আছে। এ ছাড়া জেলা, শহর, বিভাগ ও দেশের নাম, ‘জাতীয়’, ‘আন্তর্জাতিক’ এই ধরনের কোনো শব্দ ব্যবহার করে কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রস্তাব করা যাবে না।
এ ছাড়াও পূর্বেই এই আইনের কিছু সংশোধনীর কথা বলেছিল ইউজিসি। এতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডে শিক্ষাবিদ থাকতে হবে। বোর্ড অব ট্রাস্টিজের (বিওটি) কোনো সদস্য এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো লাভজনক পদে থাকতে পারবেন না। বিভিন্ন সভা করে বিওটি সদস্যদের অ্যালাউন্স নেয়ার নিয়মও বন্ধ করা হচ্ছে প্রস্তাবিত আইনে। প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়, সভায় অংশগ্রহণ করেও কোনো আর্থিক সুবিধা নিতে পারবেন না ট্রাস্টি সদস্যরা। এই সদস্যরা আইন অমান্য করলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ১০ লাখ টাকা জরিমানা আদায়ের বিধান রাখা হয়েছে। এতে বলা হয়, হাইওয়ে বা বাইপাস সড়কের পাশে নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা যাবে না। বোর্ড অব ট্রাস্টিজে কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষাবিদ থাকতে হবে। সরকারের পূর্ব অনুমোদন ছাড়া ট্রাস্টি বোর্ডে কোনো পরিবর্তন করা যাবে না। বোর্ডে ইউজিসি বা সরকারের একজন পর্যবেক্ষক মনোনয়নেরও বিধান রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর পদের জন্য স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপক্ষে ১৮ বছর শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। শুধু প্রশাসনিক কাজে অভিজ্ঞদের ভাইস চ্যান্সেলর হওয়ার সুযোগ রাখা হচ্ছে না প্রস্তাবিত আইনে। এ ছাড়া তৃতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএ পাওয়া অধ্যাপকের ভাইস চ্যান্সেলর পদে থাকার সুযোগ থাকবে না।
কোনো প্রোগ্রামে বা কোর্সে পড়ার বেতন কাঠামো দেখে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হওয়ার পর সেই প্রোগ্রাম বা কোর্স শেষ না হওয়া পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের টিউশন ফি বাড়াতে পারবে না। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়, কর্তৃপক্ষ বা ব্যক্তি কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে প্রশাসনিক আদেশের মাধ্যমে ইউজিসি অভিযুক্ত ব্যক্তি বা বিশ্ববিদ্যালয়কে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করতে পারবে- এসব বিধান রেখে নতুন করে সংশোধন করা হচ্ছে ‘বেসররকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০’ আইন। সমপ্রতি তা মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট এই খসড়া প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক হলেন ইউজিসি’র সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ। কমিটির সদস্য সচিব মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. আব্দুল মতিন।
কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন- বাংলাদেশ অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. গোলাম শাহী আলম, ইউজিসি’র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক মো. ওমর ফারুখ এবং একই বিভাগের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম। এ বিষয়ে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, আইনটি সংশোধন করা হলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অধিকার আরও রক্ষিত হবে। প্রণীত খসড়ার ওপর ইউজিসি’র মতামত চাওয়া হয়েছিল। আমরা মতামত মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এখন মন্ত্রণালয় পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপ-সচিব (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-১) ড. মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, ইউজিসির মতামত আমরা পেয়েছি। সবার মতামত পেলে সভা ডেকে আমরা খসড়া চূড়ান্ত করবো। তথ্য : মানবজমিন।