কম্পিউটার প্রোগ্রামিং সমস্যা সমাধানের জন্য সারা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা “আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনালস ঢাকা” এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান গত ৮ নভেম্বর ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা (আইসিসিবি) গুলনকশা হলে অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন, এম.পি. ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক এমপি উপস্থিত ছিলেন। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইসিপিসি ফাউন্ডেশনের সভাপতি এবং আইসিপিসি নির্বাহী পরিচালক ড. উইলিয়াম বি. পাউচার।
অন্যান্যদের মধ্যে আইসিপিসির উপনির্বাহী পরিচালক ও আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনালস্ কনটেস্টের পরিচালক ড. মাইকেল জে. ডোনাহু, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য ও আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনালস্ ঢাকার পরিচালক অধ্যাপক কামরুল আহসান এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এর নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমার ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বলেন, “এই মর্যাদাপূর্ণ আইসিপিসি প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা সবার জন্য সহজ, সুলভ এবং ন্যায়সঙ্গত সমাধানসহ একটি সমৃদ্ধ ডিজিটাল বিশ্ব গঠনে বাংলাদেশের অঙ্গীকারের প্রতীক। আজকের এই প্রতিযোগিতা সমস্যার সমাধান করার চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরো বলেন, প্রকৃতপক্ষে একটি নতুন বাংলাদেশ এবং এর অনেক নতুন সক্ষমতার স্বীকৃতি হলো- এই প্রতিযোগিতা যেখানে ডিজিটালাইজেশনে রাষ্ট্রীয় নীতি এবং অগ্রাধিকারমূলক পদক্ষেপে নিহিত আছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক এমপি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের দীর্ঘমেয়াদী কল্যাণের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নকে সর্বদা উচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভিত্তিক সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন।”
প্রোগ্রামিংয়ের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, এটি আমাদের বিশ্বকে উন্নত করতে সহায়তা করতে পারে। তিনি প্রতিযোগিতার পরিবর্তে একে অপরকে সহযোগিতা করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, প্রোগ্রামিং হবে ভবিষ্যতের ভাষা। প্রোগ্রামিং সংস্কৃতি, ভাষা এবং সমাজের মধ্যে ব্যবধান দূর করতে সহায়তা করতে পারে। প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, এটি বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের মাধ্যমে স্পষ্ট। আমি বিশ্বাস করি যে প্রোগ্রামাররা আগামীদিনের সমস্যা সমাধানকারী।
পলক আরো বলেন, বাংলাদেশ হলো দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ। আমরা আইসিটি ব্যবহার করে সকল খাতে উল্লেখযোগ্যভাবে অগ্রগতি লাভ করেছি। প্রতিমন্ত্রী সৃজনশীলতা, সহযোগিতা এবং সহ-নির্মাণের গুরুত্বও ব্যাখ্যা করেন।
আইসিপিসি ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. উইলিয়াম বি. পাউচার বলেন, ঢাকায় এসে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। আমরা আমাদের উদ্দেশ্য পূরণে কাজ করে যাচ্ছি। বর্তমান বিশ্বকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে আজকের কম্পিউটার বিজ্ঞান প্রকৌশলীসহ তরুণ প্রজন্মের অগ্রগতি নিশ্চিত করার জন্য আমাদের এ প্রয়াস।
ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, ইউএপি বিশ্বাস করে ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরিতে তথ্যপ্রযুক্তি এক যুগান্তকারী ভুমিকা রাখছে। তিনি বলেন, এটি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে আমরা ইউএপি পরিবার অত্যন্ত গর্ববোধ করছি। এই আন্তর্জাতিক আয়োজনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে এবং বিশ্বে উল্লেখ্যযোগ্য পরিবর্তন আনতে ভুমিকা রাখবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এছাড়া সারা বিশ্বের সেরা কম্পিউটিং মেধাবীদের সাথে সংযুক্ত হতে সাহায্য করবে এই আইসিপিসি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রতিযোগীসহ দেশি-বিদেশি প্রায় এক হাজারের বেশি অতিথি উপস্থিত ছিলেন। উক্ত আয়োজনে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে সেলিব্রেশন অফ গ্লোবাল ইয়ুথ, দ্য কনভারজেন্স (মিউজিক অফ দ্য ওয়ার্ল্ড এক্স এআই) এবং সাউন্ড অফ দ্য ন্যাশন বিষয়ক মোট তিনটি সাংস্কৃতিক পরিবেশনা প্রদর্শিত হয়।
আইসিপিসি ফাউন্ডেশন উক্ত আয়োজনের হোস্ট, কোচ, স্পন্সর এবং আঞ্চলিক প্রতিযোগিতার পরিচালকদের (আরসিডি) অবদানের স্মরণে ফলক উপস্থাপন করেন। আইসিপিসি ফাউন্ডেশন ফলক উপস্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশে আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনাল আয়োজনের স্বপ্ন দেখা ব্যক্তিত্ব প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক ও ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের প্রাক্তন ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীকে সম্মান জানায়। অনুষ্ঠানে প্রয়াত এই জাতীয় অধ্যাপকের অবদানের জন্য প্রাপ্ত অ্যাওয়ার্ড মরহুম জামিলুর রেজা চৌধুরীর স্ত্রী গ্রহণ করেন।
আগামী ১০ নভেম্বর বসুন্ধরার আইসিসিবিতে ৪৫তম আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনালস্ অনুষ্ঠিত হবে৷ সারা বিশ্ব থেকে ১৩৭টি দল এ বছরের ওয়ার্ল্ড ফাইনালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। প্রতিযোগিতাটি উদযাপন করতে ৭০টি দেশ থেকে এক হাজারের বেশি অতিথি ঢাকায় অবস্থান করছেন। বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের নেতৃত্বে আইসিপিসি-এর ৪৫তম আসরের নির্বাহক এজেন্সি বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এবং বাংলাদেশের থেকে হোস্ট ইউনিভার্সিটি ‘ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক (ইউএপি)’।