নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা: করোনা অতিমারির নেতিবাচক প্রভাব অধিকাংশ বাণিজ্যিক খাতে পরলেও সময় আর ভোক্তা চাহিদা বিবেচনায় বেড়েছে অনলাইন বাণিজ্যের পরিসর ও আকার। ভোক্তাগণ অনেকটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছেন ই-কমার্সে।
একটি তথ্যমতে, ২০১১-২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশে ই-কমার্সের প্রসার বাড়ছে। বর্তমানে বই থেকে শুরু করে জামাকাপড়, খাবার, শৌখিনসামগ্রী ইত্যাদি ই-কমার্সের মাধ্যমে বেচাকেনা হচ্ছে।
তবে বাংলাদেশে ই-কমার্স খাত গতি পেতে শুরু করে ২০১৩ সাল থেকে। সে বছর দুটি ঘটনা ঘটেছিল। প্রথমত, ক্রেডিট কার্ড দিয়ে আন্তর্জাতিক কেনাকাটার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। একই বছর দেশের মোবাইল অপারেটরগুলো দ্রুতগতির তৃতীয় প্রজন্মের ইন্টারনেট সেবা (থ্রিজি) চালু করে।
মূলত বাংলাদেশে ই-কমার্সের শুরুটা অনেকটা উঠানামার মধ্যে শুরু হয়। এরপর প্রসার লাভ করতে থাকে ইন্টারনেট সেবার মানোন্নয়ন ও লেনদেন ব্যবস্থায় স্বাচ্ছন্দ্য আসার পর থেকে।
সর্বশেষ তথ্যমতে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশের ই-কমার্সের বাজার দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৪৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে। যা বেড়ে ২ হাজার ৭৭ মিলিয়ন ডলার হবে। আর আগামী ২০২৩ সালে বাজারের আকার হবে ৩ হাজার ৭৭ মিলিয়ন ডলারের।
বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংক্রান্ত জাতিসংঘ সম্মেলন (আঙ্কটাড) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে বিশ্বব্যাপী ই-কমার্সের বিক্রি বেড়েছে ১৩ শতাংশ। এই হিসাবের মধ্যে বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত থাকলেও দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোক্তাদের সংগঠন ই- কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) বলছে ভিন্ন কথা। তারা বলছে, বাংলাদেশে এই বিক্রির পরিমাণ আরও বেশি। আঙ্কটাডের দেওয়া তথ্যের প্রায় দ্বিগুণ বা ২৫ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, ১-৫ এপ্রিল বৈশ্বিকভাবে ই-কমার্স সপ্তাহ পালন করা হয়। বাংলাদেশে পালিত হয় ৭-১৪ এপ্রিল। আর ই-কমার্স দিবস পালন করা হয় ৭ এপ্রিল। এ তো গেলো বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত ও পরিসংখ্যান। তবে গত ২০২০ সালে বাংলাদেশে ই-কমার্সের প্রসারের একটা বাস্তব চিত্র আমরা দেখেছি। লকডাউনে যখন সবকিছু স্থবির, তখনও মানুষের চাহিদাগুলো বরাবরের মতোই ছিল। তাই ভরসা ছিলো ই-কমার্সের মাধ্যমে কেনাকাটা করা। বিরূপ পরিস্থিতির কারণে মানুষ কেনাকাটাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।
গত একটা বছর অনলাইনে কেনাকাটা বুঝিয়ে দিয়েছে ই-কমার্স মানেই প্রতারণা নয়। বরং ই-কমার্স মানে স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য। ই-কমার্সের প্রসারের কল্যাণে বন্ধ হয়ে যাওয়া তাঁত ফিরে পেয়েছে নতুন জীবন। হাসি ফুটেছে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের মুখে। শত দুরাবস্থায়ও কত কত সংসার যে চলেছে ই-কমার্সের মাধ্যমে পণ্য বা সেবা বিক্রির মাধ্যমে, তার হিসেব নেই। গত বছরের পরিস্থিতিতে ই-কমার্সের ভিতটা যেমন মজবুত হয়েছে, তেমনই ২০২১ সালে সেই ভিতের উপর নতুন নতুন ইতিহাস রচনা হচ্ছে প্রতিণিয়ত।
এমন পরিস্থিতিতে আরও গতিশীলতা ও প্রাণচাঞ্চল্য পেয়েছে দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোক্তাদের সংগঠন ই- কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)। ২০১৪ সালে বাণিজ্যিক সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ই-ক্যাবের বর্তমান সদস্য প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১ হাজার ৭০০টি।
আগামী ১৮ জুন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ই-ক্যাবের ২০২২-২৪ সালের ৪র্থ দ্বি-বার্ষিক কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন। এরই মধ্যে নির্বাচনে অংশ নিতে ৯টি পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ৩৬ জন। তাদের মধ্যে অন্যতম উদ্যোক্তা এবং সংগঠক হিসেবে সুপরিচিত ও ‘যাচাই.কম’-এর প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল আজিজ। আসন্ন নির্বাচনে পরিচালক পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তিনি।
শিক্ষা, বাণিজ্য, গার্মেন্টস, আবাসন ও গণমাধ্যম প্রভৃতি খাতের সুপরিচিত মুখ প্রকৌশলী আব্দুল আজিজ একজন সফল ব্যক্তিত্ব। তার জন্ম নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়নের মৌলভিপাড়া গ্রামে। বাবা সরকারি ব্যাংকে চাকরিজীবী হওয়ার সুবাদে বাংলাদেশের পড়েছেন বিভিন্ন স্কুলে। আব্দুল আজিজ শিক্ষা জীবনে এসএসসি পাশের পর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং, বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং, এমবিএ এবং আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি গ্রহন করেছেন।
সফল এই উদ্যোক্তার কর্মজীবন শুরু হয় সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে। মেধাতালিকার ভিত্তিতে বাংলাদেশ সরকারের রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগে সরকারি চাকরির সুযোগ পেয়ে তিনি রেলওয়ের চট্রগাম বিভাগে যোগদান করেন।
আব্দুল আজিজ পরিষ্কার বুঝতে পেরেছিলেন, অনেক ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান দক্ষ জনশক্তির অভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং এই কারণে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই সরকারি চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সাহসী সিদ্ধান্ত তিনি নেন। দেশের কল্যাণে এবং অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখার সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছিলেন। বৈদেশিক রিজার্ভ রক্ষার জন্য এবং বিদেশী দক্ষ জনশক্তির উপর নির্ভরশীলতা কিছুটা কমিয়ে আনতে তিনি দক্ষ জনশক্তি তৈরি করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন।
আব্দুল আজিজ ছোট আকারে একটি গার্মেন্টস বায়িং হাউজ দিয়ে ব্যাবসায়ি হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। কিন্তু ওই ব্যবসায়ের দায়িত্বে নিয়োজিত দক্ষ জনশক্তির অভাবে কর্মজীবনের শুরুতে তিনি বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছিলেন।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন টেকনোলজি (এনআইএফটি) নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করে তিনি এনআইএফটিতে গার্মেন্টস এবং টেক্সটাইল বিষয়ে সার্টিফিকেট, ডিপ্লোমা, এবং অনার্স এবং এমবিএ প্রোগ্রাম চালু করেন।
আব্দুল আজিজ ই-কমার্স সেক্টরে বিনিয়োগের পাশাপাশি টেক্সটাইল এবং গার্মেন্টস সেক্টরের পাশাপাশি বিনিয়োগ করেন অটোমোবাইল, আমিষ ব্র্যান্ডের এগ্রো খামার, সফটওয়্যার কোম্পানি, টেস্ট্রি এবং সতেজ নামে আলাদা দুটি অর্গানিক এবং প্রসেসিং ফুড ব্র্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজ, মেট্রো সুপারশপ এবং রিটেইল বিজনেস, মিডিয়া, লজিস্টিকস কোম্পানি এবং আবাসন খাতের ব্যবসায়। এর পাশাপাশি আব্দুল আজিজ ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে অন্যতম সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (এনআইইটি), ন্যাশনাল প্রফেশনাল ইনস্টিটিউটের (এনপিআই), বিজিআইএফটি ইনস্টিটিউট অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (বিআইএসটি), ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল টেকনোলজি (এনআইএমটি), অগ্রনী মডেল স্কুল এন্ড কলেজ, ভাউয়াল গাজীপুর মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট (বিজিএমআই)।
আব্দুল আজিজ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধিভূক্ত প্রতিষ্ঠানের সংগঠনের সদস্যদের অধিকার আদায়ের জন্য ”টেকনিক্যাল এডুকেশন কন্সোর্টিয়াম অব বাংলাদেশ (টেকবিডি)” এর কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতাদের অধিকার আদায়ের জন্য প্রতিষ্ঠিত সংগঠন ”প্রফেশনাল ইনস্টিটিউট এসোসিয়েশন অব ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (PIANU)” এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন করছেন।
সময় স্রোতে পৃথিবীতে হানা দেয় অদৃশ্য শত্রু করোনা। বিশ্ব আর মানবজীবন হয়ে পরে স্থবির। প্রথাগত বাণিজ্যেও তার কালো ছায়া পরে। বাস্তবতার নিরিখেই মানুষ নির্ভরশীল হয়ে পরে ই-কমার্সে। বিশ্বায়নের এমন যুগে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ আর চতুর্থ শিপ্ল বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মুকাবিলায় প্রকৌশলী আব্দুল আজিজ প্রতিষ্ঠা করেন ‘যাচাই.কম’। অল্প সময়ে ভোক্তা চাহিদা অনুযায়ী মানসম্মত পণ্য সরবরাহ করে আস্থা অর্জন করে যাচাই ডট কম।
আর এই যাত্রায় তিনি লক্ষ করেন, সম্ভাবণাময় ই-কমার্স খাতের কিছু সঙ্কট আর চ্যালেঞ্জ। যার কারণে বিভিন্ন খাতে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে ই-কমার্স খাত। যা এই উদ্যোক্তাকে ভীষণ ভাবিয়ে তোলে। সিদ্ধান্ত নেন অনলাইন বাণিজ্যের সম্ভাবণা কাজে লাগাতে সঙ্কট মুকাবিলায় সক্রিয় অংশগ্রহণের। আর তাই ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) একজন সদস্য হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
বহুমাত্রিক প্রতিভা আর সফলতার অধিকারী এই ব্যক্তিত্বের স্বপ্ন, আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণের একজন অংশগ্রহণকারী হিসেবে ই-কমার্স খাতের নানান সঙ্কট মুকাবিলা করে পৃথিবীর বুকে দেশের নাম আরও উজ্জ্বল করা। পাশাপাশি ভোক্তা চাহিদা পূরণ করে ই-কমার্স খাতকে আরও বেশি গ্রাহকবান্ধব করে দেশের অর্থনীতিতে কার্যকর ভূমিকা রাখা।