১ এপ্রিল ১৯৭১
জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি সমর সেন বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্টের কাছে ১ এপ্রিল ভারতের পক্ষ থেকে একটি চিঠি দেন। চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশে পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাদের নির্যাতন এমন এক স্তওে গিয়ে পৌঁছেছে, সেটিকে তাদেও অভ্যন্তরীণ বিষয় মনে কওে নিক্রিয় থাকার সময় নেই।
২ এপ্রিল ১৯৭১
২ এপ্রিল ঢাকায় সান্ধ্য আইনের মেয়াদ সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত করা হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনী এই দিন বুড়িগঙ্গা নদী পার হয়ে ঢকার দক্ষিণে জিঞ্জিরায় ব্যাপক গণহত্যা চালায়।
৪ এপ্রিল ১৯৭১
বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত প্রতিরোধযোদ্ধা দলের অধিনায়কেরা ৪ এপ্রিল হবিগঞ্জের মাধবপুরের মুক্তাঞ্চল তেলিয়াপাড়ায় সমবেত হন। সেখানে তাঁরা একটি বৈঠক করেন। বৈঠকটি হয় তেলিয়াপাড়া চা-বাগানের ডাকবাংলোতে।
৫ এপ্রিল ১৯৭১
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যেও কলকাতায় ৫ এপ্রিল বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রাম সহায়ক সমিতির এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সভাপতি ছিলেন পশ্চিমবঙ্গেও মুখ্যমন্ত্রী অজয় মুখোপাধ্যায়। সভায় নেওয়া এক প্রস্তাবে স্বাধীন ও সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি জানানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
৬ এপ্রিল ১৯৭১
পূর্বাঞ্চলে (বাংলাদেশ) অস্ত্রবিরতির জন্য পাকিস্তান সরকারকে চাপ দিতে ৬ এপ্রিল যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। প্রস্তাবে দেশটির ১৮০ জনের বেশি সাংসদের স্বাক্ষর ছিল।
৭ এপ্রিল ১৯৭১
ভারতের রাজধানী দিল্লির পাকিস্তান হাইকমিশনের দুজন বাঙালি কূটনীতিক শোহাবউদ্দিন আহমদ ও আমজাদুল হক ৭ এপ্রিল পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ কওে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেন। তাঁরাই প্রথম কোনো বাঙালি কূটনীতিক, যাঁরা বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেন।
৯ এপ্রিল ১৯৭১
অবরুদ্ধ পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসক লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান ৯ এপ্রিল পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হিসেবে ঢাকায় শপথ নেন। শপথ পরিচালনা করেন ঢাকা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বি এ সিদ্দিকী।
১০ এপ্রিল ১৯৭১
২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার আলোকে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ দলের হাইকমান্ডের সদস্যদেও নিয়ে সরকার গঠন করেন। এরপর বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১০ এপ্রিল রাতে তিনি ভাষণ দেন। ভাষণটি স্বাধীন বাংলা বেতারের গোপন কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয়।
১২ এপ্রিল ১৯৭১
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আটক করার পর ১২ এপ্রিল তাঁর ছবি ‘দৈনিক পাকিস্তান’ সহ কিছু পত্রিকায় ছাপা হয়। ‘দৈনিক পাকিস্তান’- এ ক্যাপশন ছিল, ‘আটক অবস্থায় করাচি বিমানবন্দরে শেখ মুজিবুর রহমান’।
১৩ এপ্রিল ১৯৭১
নবগঠিত বাংলাদেশ সরকার ১৩ এপ্রিল জনগণের প্রতি নয়টি নির্দেশনা জারি করে। এর প্রথমটিতেই চিকিৎসা ও সেবাশুশ্রুষার জন্য আহত ব্যক্তিদেও চিকিৎসক বা কবিরাজের কাছে নিয়ে যেতে বলা হয়। বাকিগুলো ছিল সরাসরি মুক্তিসংগ্রাম নিয়ে।
১৭ এপ্রির ১৯৭১
নবগঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিপরিষদেও সদস্যরা ১৭ এপ্রিল প্রকাশ্যে শপথ নেন। শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন হয় কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আ¤্রকাননে, বেলা ১১টায়। বৈদ্যনাথতলা তখন মুক্তাঞ্চল। সেদিনই এলাকাটির নামকরণ করা হয় মুজিবনগর।
১৮ এপ্রিল ১৯৭১
ব্রাক্ষণবাড়িয়ার দরুইন গ্রামে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখসমওে শহীদ হন সিপাহি মোস্তফা কামাল (বীরশ্রেষ্ঠ)।
১৯ এপ্রিল ১৯৭১
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এই দিনে দেশবাসীর উদ্দেশে ১৮ দফা নির্দেশনামা জারি করেন। তিনি সরকারের নির্দেশ মেনে কাজ করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
২০ এপ্রিল ১৯৭১
রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা ও খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলা সীমান্তে এই দিনে নিজে প্রাণ দিয়ে বহু সহযোদ্ধার জীবন রক্ষা করেন বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ।
২১ এপ্রিল ১৯৭১
প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধেও পক্ষে জনমত সৃষ্টি এবং কূটনৈতিক তৎপরতা শুরুর লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ২১ এপ্রিল বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে বহির্বিশে^ ও জাতিসংঘে বাংলাদেশ কূটনৈতিক মিশরের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দেয়।
২৩ এপ্রিল ১৯৭১
বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ২৩ এপ্রিল যুক্তরাজ্যেও সাংসদ ব্রুস ডগলাস-মানকে সাক্ষাৎ দেন। যশোরের বেনাপোলে মুক্তিযোদ্ধাদেও ঘাটিতে রাঁরা এক ঘন্টা আলোচনা করেন।
২৫ এপ্রিল ১৯৭১
যুক্তরাষ্ট্র্রের ১০ জন সিনেটর ২৫ এপ্রিল এক যুক্ত বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, পাকিস্তান সরকার পূব বাংলার জন্য আপৎকালীন ত্রাণকাজের ব্যবস্থা করেনি। আন্তজাতিক রেডত্রুসকেও সেখানে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে পাশ্চত্য দেশগুলো ও জাতিসংঘের উচিত হবে পাতিস্তানে বৈদেশিক সাহায্য বন্ধ করে দেওয়া।
২৭ এপ্রিল ১৯৭১
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়কে নিযুক্ত পাকিস্তানের ভাইস কনসাল এ এইচ মাহমুদ আলী আনুগত্য প্রকাশ করে বাংলদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদেও কাছে তরবাতা পাঠান।
২৯ এপ্রিল ১৯৭১
ভারতের রাজস্থান রাজ্যেও বিধানসভার সাকার ও বিরোধী দলের বেশ কয়েকজন সদস্য ২৯ এপ্রিল বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলেন। তাঁরা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি দাবি জানান।