শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে বাংলাদেশেও উদযাপিত হলো ‘বিশ্ব শব্দ করে পড়া দিবস-২০২২’
কোমলমতি শিশুদের ছোটবেলা থেকেই শব্দ করে পড়ায় উৎসাহিত করতে প্রতি বছরের মতো এবারও বিশ্বজুড়ে উদযাপিত হচ্ছে ‘শব্দ করে পড়া দিবস-২০২২’। এরই ধারাবাহিকতায় ফেব্রয়ারি মাসের প্রথম বুধবার (২ ফেব্রয়ারি) এক ওয়েবিনারের আয়োজন করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘রিড অ্যালাউড বাংলাদেশ’। অনুষ্ঠানে বক্তারা মেধাভিত্তিক আগামী প্রজন্ম গড়তে শব্দ করে পড়ার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।
রিড অ্যালাউড বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা রূপক সিংহ এর সভাপতিত্বে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ড. মো. ওমর ফারুক, অতিরিক্ত সচিব, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়। রঞ্জিত কুমার দাস, অতিরিক্ত সচিব, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। অধ্যাপক ডা. এন কে ঘোষ, জাতীয় শিশু হাসপাতাল। সরদার রাকিবুল ইসলাম, অতিরিক্ত কমিশনার, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশসহ অন্যান্যরা। এছাড়া এই অনুষ্ঠানটিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শিশু-কিশোর এবং অভিভাবকরাও যুক্ত হয়েছেন।
সেমিনারে শিশুদের শব্দ করে পড়ার তাগিদ দিয়ে ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, “শব্দ করে পড়ার প্রয়োজনীয়তা বহুমাত্রিক। মানুষকে সুন্দরভাবে বুঝাতে সক্ষম হতে চাইলে শ্রæতিমধুরভাবে কথা বলতে জানতে হবে। এগুলো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অংশ। আমরা দেখতে পাই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেও অনেক শিক্ষার্থী সঠিক উচ্চারণে কথা বলতে পারে না। কারণ তার ভুল ত্রটি কেউ শুধরে দেয়নি। শব্দ করে পড়ার অভ্যাস তৈরি করলে শিশুদের ছোটবেলা থেকেই এ ভুলগুলো সম্পর্কে সচেতন করা সম্ভব হবে।”
ড. মো. ওমর ফারুক তার বক্তব্যে জানান, ডিজিটাল ডিভাইস সার্বক্ষণিক ব্যবহারের ফলে আজকের শিশুরা অনেক বেশি আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছে। তারা মোবাইল ফোনেই পৃথিবীটা দেখে। এ কারণে তাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে জড়তাও। শিশুদের অন্যদের সাথে মেলামেশা ও তাদের কথা বলার অভ্যাস গড়ে তুলতে শব্দ করে পড়ার ওপর গুরুত্ব দেয়া জরুরি।
অধ্যাপক ডা. এন কে ঘোষ বলেন, “আমরা যখন শব্দ করে পড়ি তখন অনেকগুলো ইন্দ্রিয় একসাথে ওই বিষয়টি মনে রাখতে সাহায্য করে। তাই শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে শব্দ করে পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
রঞ্জিত কুমার দাস বলেন, “শব্দ করে পড়লে পড়ায় মনোযোগ ধরে রাখা যায়, উচ্চারণটা সঠিক না ভুল, তা অন্যরা শুধরে দিতে পারে। আমরা যখন ছোট ছিলাম পরিবার থেকে এ বিষয়টির ওপর জোর দেওয়া হতো। এখন হয়তো আগের মতো শব্দ করে পড়া নিয়ে অতটা ভাবা হয় না। নতুন করে সবার সামনে এটিকে নিয়ে আসায় আমি রিড অ্যালাউড বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
রূপক সিংহ অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া শিশুদের উদ্দেশে বলেন, “তোমরা এখন যে শিক্ষা নেবে, সেভাবেই ভবিষ্যতে নিজেকে তৈরি করবে। এজন্য তোমাদের সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে আমাদের আজকের এই আয়োজন। মনে রাখবে, শব্দ করে পড়ার অভ্যাসের সঙ্গে নিবিড় পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক রয়েছে। তাই ‘শব্দ করি পড়ি, নিজেকে আবিষ্কার করি’ এই প্রত্যয়ে তোমরা দেশ ও জাতিকে সমৃদ্ধ করে তোলো, এটাই আমার চাওয়া।”
এছাড়া, এদিন ভার্চুয়াল সেমিনারে আরো আয়োজন করা হয়, গল্প কথন, কবিতা আবৃত্তি, গান ও উপস্থিত বক্তৃতার। অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া শিশুরা শব্দ করে পড়ার গুরুত্ব সম্পর্কে তাদের নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা তুলে ধরে। এদের মধ্য থেকে ৫০ জনকে রিড অ্যালাউড বাংলাদেশ-এর স্থায়ী সদস্য পদ দেয়া হবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। এরপর তাদের সঙ্গে নিয়ে পরিচালনা করা হবে বছরব্যাপী ‘শব্দ করে পড়া’ বিষয়ক ক্যাম্পেইন। প্রসঙ্গত, রিড অ্যালাউড বাংলাদেশ বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশে ‘বিশ্ব শব্দ করে পড়া দিবস’ পালন করে আসছে