শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি করা হলেও বর্তমানে জাতীয় বাজেটের দুই শতাংশ দেয়া হলেও তা ব্যয় করার সক্ষমতা দেখা যায় না। এ খাতে মোট বাজেটের ৮০-৮৫ শতাংশ ব্যয় হলেও বাকিটা ফেরত দেয়া হচ্ছে। সক্ষমতা ও জনবল সংকট থাকায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম।
সোমবার আর্ন্তজাতিক শিক্ষা দিবস-২০২২” উপলক্ষে গণসাক্ষরতা অভিযানের আয়োজিত ভার্চুয়াল শিক্ষা সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমন কথা বলেন। অনুষ্ঠানের সঞ্চলনা করেন আয়োজন প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী রাশেদা কে চৌধুরি।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রের দায়িত্ব সবাইকে শিক্ষার সুযোগ তৈরি করা। বর্তমান সরকার শিক্ষা ব্যবস্থায় অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। সংখ্যাগত শিক্ষার হার অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে মানসম্মত শিক্ষা থেকে আমরা পিছিয়ে আছি। এখনো গুনগত শিক্ষা প্রতিষ্ঠা হয়নি। শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি বৈপ্লবিক আন্দোলন প্রয়োজন। এ আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে। ৮ম শ্রেনি পর্যন্ত দেশে সর্বজনীন বাধ্যতামূলক শিক্ষা করা প্রয়োজন।
শিক্ষার নামে অনেকে বাণিজ্য করছে। কেউ আবার সনদ বিক্রি করছে। দেশের অনেক বিশ^বিদ্যালয়ে গবেষণা কাজ ছাড়া চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা মানবসম্পদ তৈরি থেকে অনেক পিছিয়ে আছি বলে আমাদের শ্রমিরা বিদেশে গিয়ে অল্প মজুরি পাচ্ছে। সেখানে নানা ধরণের প্রতিবন্ধকতার স্বীকার হতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, অনেকে শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি তুললেও বর্তমান বাজেটে বরাদ্দ দেয়া সকল অর্থ ব্যয় করতে পারছে না। মোট বরাদ্দের ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় করে বাকিটা ফেরত দিচ্ছে। সক্ষমতা ও জনবল সংকটের কারণে এমন অর্থ ব্যয় করতে পারছে না।
আলোচনায় অংশনেয়া গবেষকরা বলেন, ঝড়ে পড়া ছেলে-মেয়েদের স্কুলে ফিরে যাওয়ার পথ সহজ নয়। অনেক মেয়ের বাল্য বিবাহ, কাজে যুক্ত হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে ঝড়ে যাচ্ছে। পরে তারা পড়ালেখার ফিরে আসতে চাইলেও তা সহজে পারছে না। সে জন্য নৈশ স্কুলের সংখ্যা বৃদ্ধি ও গ্রামের স্কুলে এ রাতের শিফটে ক্লাস চালু করার দাবি জানানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে রাশেদা কে চৌধুরি বলেন, ঝড়ে পড়া মেয়েদের পড়ালেখায় ফিরিয়ে আনতে তাদের জন্য উপবৃত্তি চালু করা প্রয়োজন। তবে বাল্য বিবাহ ও কাজে যুক্ত হওয়া মেয়েরা আবারো পড়ালেখায় ফিরে আসবে। ঝড়ে পড়ার হারও কমে যাবে।
আরেক গবেষক প্রাবন কান্তি ঘোষ বলেন, গ্রামে কারিগরি শিক্ষায় মেয়েরা আসতে চায় না। সেখানের মানুষ মনে করে এসব কাজ ছেলেদের জন্য, মেয়েরা কেন এসব বিষয়ে পড়ালেখা করবে। অনেক কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বড় বড় ল্যাব করা হলেও সেখানে ইন্সট্রাকটর নেই বলে সেগুলো নষ্ট হওয়ার পথে। অনেক দূর্গম এলাকায় শিশুরা ক্ষুধার জন্য ছুটির হওয়ার আগে স্কুল ছেড়ে বাসায় চলে যায়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড ডে মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক জেলায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
অপর আলোচক বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রাথমিক বিদ্যালয় শিশুদের দুপুরে পুষ্টিকর খাবার বিরতণ করতে নির্দেশনা দিলেও সেটি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। দেশের অনেক জেলার স্কুলে পুষ্টিকর বিস্কুট বিতরণ করা হলেও অজ্ঞত কারনে তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মিড ডে মিল চালু করতে নতুন করে প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করার কথা থাকলেও এক বছরেও তা হয়নি।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কারিগরি ও বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষাকে আলাদা করে দেখা হয় বলে আমাদের শিক্ষার মান বাড়ানো যাচ্ছে না। সকল স্তরের শিক্ষাকে অভিন্নভাবে সাজাতে হবে। শিক্ষার গতি এক না হলে তা কল্যাণে আসবে না। আমাদের উচ্চ শিক্ষার অনেক সমস্যা রয়েছে। চিকিৎসক যদি প্রশাসনের দায়িত্বে বসানো হয় তবে জটিলতা তৈরি হবে। সংখ্যা দিয়ে কোন দেশের শিক্ষার মান বিবেচনা করা যাবে না।
শিক্ষাকে মানবাধিকার হিসেবে দেখতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জনগণের সম্মতি মনে করতে হবে। গ্রামের শিক্ষার্থীরা ডিজিটাল সুবিধা থেকে অনেক পিছিয়ে তাদের এগিয়ে আনার আহ্বান জানান।
শিক্ষবিদ কাজী খলিকুজ্জামান বলেন, শিশুদের জন্য শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হলে আগে শিক্ষা আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। ২০১০ সালে এ আইন প্রণয়ন করা হলেও এখানো তা ঝুলে রয়েছে। দ্রুত সেটি বাস্তবায়ন করার দাবি জানান তিনি।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করেন শিক্ষাক্ষেত্রে কর্মরত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রাতিষ্ঠানিক জোট হিসেবে গণসাক্ষরতা অভিযান এবছর সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, নাগরিক সমাজ, শিক্ষক সংগঠন, যুব সংগঠন ও শিক্ষার্থী প্রমুখ।