আন্তর্জাতিক নারী সহিংসতা প্রতিরোধ দিবস উদযাপন উপলক্ষে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির যৌন হয়রানি রোধে গঠিত কমিটি ‘নারীর প্রতি সহিংসতা নির্মূল’ শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করেছে।
গত ২৭ নভেম্বর আশুলিয়ায় ড্যাফোডিল স্মার্ট সিটিতে অবস্থিত ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স রুমে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রেসিডেন্ট ড. ফৌজিয়া মোসলেম। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের এসপি মাহফুজা লিজা, বিপিএম। এছাড়া সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালের জেলা জজ শামিমা আফরোজ। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সহযোগী ডিন অধ্যাপক ড. ফারহানা হেলাল মেহতাবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক এ এম এম হামিদুর রহমান, ইংরেজি বিভাগের প্রধান ড. লিজা শারমিন, অ্যাডভোকেট সালেহা সুলতানা প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফাহমি হাসান। সেমিনার শুরুর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ মাঠে অতিথিরা বেলুন উড়িয়ে আন্তর্জাতিক নারী সহিংসতা প্রতিরোধ দিবস উদযাপনের শুভ সূচনা করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. ফৌজিয়া মোসলেম বলেন, আমরা এমন এক পৃথিবী চাই যেখানে নারী পুরুষ সবাই সমান মর্যাদা নিয়ে বাস করতে পারবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আমরা তেমন পৃথিবী এখনো গড়তে পারিনি। এই পৃথিবীতে এখনো প্রতিনিয়ত নারীরা সহিংসতার শিকার হচ্ছে। এই সহিংসতা রোধ করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সমাজে পুরুষ নির্যাতনের ঘটনাও আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুরুষরাও নির্যাতিত হোন, তবে নারীদের তুলনায় তা খুবই কম। এজন্য দায়ী অসম ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। সমাজ তার আইন, প্রথা, রীতিনীতি ও কালাকানুন দিয়ে এসব অসম ক্ষমতা তৈরি করে দেয়। এ সময় তিনি শির্ক্ষীদের উদ্দেশে বলেন, সবার জন্য বাসযোগ্য একটি মানবিক সমাজ গড়ে তোলার ব্যাপারে তরুণ প্রজন্মকে দায়িত্ব নিতে হবে। তারা সচেতন হলে, তাদের চারপাশের মানুষকে সচেতন করতে পারবে। এখনকার তরুণ শিক্ষার্থীরা অনেক সচেতন। তাদের হাত ধরেই নারী নির্যাতনমুক্ত সাম্যের পৃথিবী গড়ে উঠবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে স্পেশাল ব্রাঞ্চের এসপি মাহফুজা লিজা, বিপিএম শিক্ষার্থীদের সামনে সাইবার ক্রাইম বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এসময় তিনি বলেন, আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় সাইবার ক্রাইম বেড়েছে। আর এই সাইবার ক্রাইমের সবচেয়ে বড় শিকার নারীরা। প্রতিদিন নারীরা ভার্চুয়াল দুনিয়ায় নানাভাবে সহিংসতার শিকার হচ্ছে। এ বিপদ থেকে পরিত্রাণের জন্য তিনি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পরামর্শ দেন। মাহফুজা লিজা বলেন, সমাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারীরা এখন অনেক বেশি সহিংসতার শিকার হচ্ছে। তাদের ফেসবুকের প্রোফাইল হ্যাক হচ্ছে, ছবি ফটোশপ করা হচ্ছে, বø্যাকমেইলিং হচ্ছে ইত্যাদি। এসব থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হচ্ছে সচেতনতা। এর পাশাপাশি প্রাইভেসি সেটিং ঠিক রাখা, অপরিচিত কাউকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করা, অচেনা লিংক বা ছবিতে ক্লিক না করা এবং অপরিচিত কারও সঙ্গে ম্যাসেঞ্জারে গল্প না করার পরামর্শ দেন পুলিশ সুপার মাহফুজা লিজা। তিনি আরও বলেন, সাইবার ক্রাইম রোধে পুলিশের ইউনিট রয়েছে। এছাড়া নারীদের সহযোগিতা করার জন্য বিশেষ ইউনিট রয়েছে। ভুক্তভোগী যেকোনো নারী যেকোনো সময় এসব ইউনিট থেকে সহযোগিতা নিতে পারেন বলে তিনি জানান।
জেলা জজ শামিমা আফরোজ বলেন, আমরা যখন এই সেমিনার করছি তখন পৃথিবীর কোথাও না কোথাও ঠিক এই কোনো না কোনা নারী নির্যাতিত হচ্ছে। অর্থাৎ নারী নির্যাতনের কোনো স্থান নেই, কাল নেই। তারা সারা পৃথিবীতেই সর্বত্র নির্যাতিত হচ্ছে। এ অবস্থার পরিবর্তনের একমাত্র পথ হচ্ছে সমাজকে পরিবর্তন করা। তিনি বলেন, সব সময় আইন দিয়ে সবকিছু পরিবর্তন করা যায় না। কোনো কোনো পরিবর্তন আসতে হয় সমাজের ভেতর থেকে। নারীর প্রতি সহিংসতা তেমন একটি বিষয়। নারীদের ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আসতে হবে একেবারে পরিবার থেকে। তারপর সমাজ, তারপর রাষ্ট্রে পরিবর্তন আসবে।