অনার্স ও মাস্টার্স পরীক্ষার রেজাল্টের জন্য রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদকে ভূষিত মো. জহুরুল ইসলামের পড়ালেখায় হাতেখড়ি বাংলাদেশের এক প্রত্যন্ত গ্রামের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তিনি ২০০০ সালে এসএসসি এবং ২০০৩ সালে এইচএসসি পাস করেন। চট্টগ্রামের ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) থেকে তিনি ২০১০ সালে পাঁচ বছর মেয়াদি ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন (ডিভিএম) ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ২০১২ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাইক্রোবায়োলজি বিষয়ে মাস্টার্স শেষ করেন।
কর্মজীবনের শুরুতে ৩০তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হওয়ায় সরকারি চাকরির পাশাপাশি সিভাসুর মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদানেরও সুযোগ আসে। তবে আমি বিসিএসের পরিবর্তে সিভাসুতে ২০১১ সালে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করি। তিনি এখনো সিভাসুতে সহযোগী অধ্যাপক পদে কর্মরত।
তিনি ২০১৫ সালে ডেনমার্ক সরকারের অর্থায়নে পূর্ণ বৃত্তি নিয়ে কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হন।
আন্তর্জাতিক ফেলোশিপ প্রতিযোগিতায় জয়ী হওয়ার পর আবারও কর্মক্ষেত্র থেকে শিক্ষাছুটি নিয়ে ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন বছরের জন্য পোস্টডক্টরাল বিজ্ঞানী হিসেবে যোগদান করে এখনো হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
অণুজীব ব্যবহার করে ছবি আঁকার প্রচলন অনেক আগে থেকেই। পেনিসিলিনের আবিষ্কারক বিজ্ঞানী আলেক্সান্ডার ফ্লেমিংকেই আগার আর্টের পথিকৃত বলা হয়।
২০১৫ সালে আমেরিকান সোসাইটি ফর মাইক্রোবায়োলজি (এএসএম) আগার আর্ট প্রতিযোগিতা শুরু করে। আগার আর্ট প্রতিযোগিতায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, গবেষক ও বিজ্ঞানীরা অংশ নেন। তাঁরা ছবি আঁকেন গবেষণাগারের ছোট্ট স্বচ্ছ পাত্রে।
২০১৬ সালের আগার আর্ট প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিলেন ডেনমার্কের ইউনিভার্সিটি অব কোপেনহেগেনের পিএইচডি প্রোগ্রামের শিক্ষার্থী বাংলাদেশের মো. জহুরুল ইসলাম। ওই প্রতিযোগিতার জন্য তার আঁকা ছবির নাম ছিল ‘দ্য ফার্স্ট রেস’, অর্থাৎ ‘প্রথম দৌড়’।
তিনি প্রাণীর নিষিক্তকরণ প্রক্রিয়া কীভাবে হয়, তা-ই দেখিয়েছিলেন ওই চিত্রকর্মে। ছবিটি আঁকতে তিনি চারটি ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করেন।
তার আঁকা ছবির ক্যানভাস হিসেবে ছিল একটি আগার (জেলির মতো একধরনের বস্তু)। লাল রঙের মাধ্যমটি ছিল স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিয়াস নামক ব্যাকটেরিয়া, যা মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর জন্য উপকারী জীবাণু। সবুজ রঙের মাধ্যমটি ছিল স্ট্যাফিলোকক্কাস জাইলোসাস, এটি মানুষের ত্বকের একটি অণুজীব ও সাদা রঙের স্ট্যাফিলোকক্কাস হাইকাস, যা শূকরের দেহের একধরনের জীবাণু। আর হলুদ রঙের অণুজীবটি ছিল কোরিনেব্যাকেরিয়াম গ্লুটামিকাম, যা একটি বন্ধু অণুজীব। অন্য রঙগুলো তৈরি করেছিলাম এই চার অণুজীবের বিভিন্ন সংমিশ্রণ থেকে।
মো. জহুরুল ইসলাম জানান, ছবিটি আঁকতে তার সময় লেগেছিল সাত দিন। প্রথম দু-তিন দিন আমি অণুজীবকে রং হিসেবে ব্যবহারের উপযোগী করে তুলি। তবে জীবাণুমুক্ত ক্যানভাস তৈরি করতে আমার সময় লেগে যায় ৬ থেকে ১২ ঘণ্টা। এরপর ক্যানভাসটি জীবাণুমুক্ত হয়েছে কি না, সেটি পরীক্ষায় ২৪ ঘণ্টা সময় ব্যয় হয়। সেই ক্যানভাসে প্রায় ৮ ঘণ্টায় জীবাণুমুক্ত রঙতুলি ও অণুজীব ব্যবহার করে ছবি একেছিলাম। ছবি আঁকার সময় রঙ হিসেবে ব্যবহার করা অণুজীবগুলো খালি চোখে দেখা যায় না বলে, অনেকটা আন্দাজের ওপর নির্ভর করে ছবি একেছিলাম। আঁকা শেষে আমি ইনকিউবেটরে ক্যানভাসটি ৪৮ ঘণ্টা রেখে দিয়েছিলাম যাতে অণুজীবগুলো দ্রুত বংশবিস্তার করে। পরে ওদের নিজস্ব রঞ্জক দৃশ্যমান হলে, শিল্পকর্মটির মূল চেহারা দেখতে পারি।