কিশোয়ারের জন্ম অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যে। মা লায়লা ও বাবা কামরুল চৌধুরীর ঘরে মেলবোর্নে জন্ম তার। বেড়ে ওঠাও অস্ট্রেলিয়াতেই। তার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা, ৫০ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান তিনি। সেখানে গিয়ে ভারতীয় লায়লা চৌধুরীর সঙ্গে তার সম্পর্ক। ভিক্টোরিয়া রাজ্যের মেলবোর্নে বাঙালি কম্যিউনিটি গড়ে তুলতে কিশোয়ারের মা-বাবা দুজনই ভূমিকা রাখেন।
গত ১৯ এপ্রিল শুরু হয় রান্নাবিষয়ক জনপ্রিয় রিয়্যালিটি শো ‘মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়া’। সেরা ২৪ জনকে নিয়ে শুরু হওয়া এ প্রতিযোগিতায় অন্যতম প্রতিযোগী ছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিশোয়ার চৌধুরী। অনুষ্ঠানের শুরু থেকেই দর্শক জনপ্রিয়তায় শীর্ষে ছিলেন কিশোয়ার। বাছাই পর্বে মাছ আর কাঁচা আমের রেসিপির পর একের পর এক বাংলাদেশি খাবার মাস্টারশেফের মঞ্চে তুলেছেন কিশোয়ার। এরপর রান্না করেছেন টমেটো এবং পুদিনা পাতা দিয়ে পাস্তা, টমেটো দিয়ে মাছের ঝোল, শিমের ভর্তা আর জিরা ভাত, গলদা চিংড়ি ভাজা, বিটরুট সবজি, শসা দিয়ে মাছ ভাজা, ফুচকা, চটপটি, সমুসা, দম-আলু আর তেঁতুল চাটনি, রেঁধেছেন খিচুড়ি, বেগুন ভর্তা আর নিরামিষ ভোজ, খাসির রেজালা আর ঘিয়ে ভাজা পরোটা, নেহারি এবং পান্তা-‘ইলিশ’ আর আলুভর্তার মতো বাঙালি খাবার। সোমবার ও মঙ্গলবার দুদিন ধরে দুই ভাগে অনুষ্ঠিত গ্র্যান্ড ফাইনালে শীর্ষ স্থানের জন্য লড়েছেন কিশোয়ার, জাস্টিন ও পিট। মাস্টারশেফের সর্বশেষ চূড়ান্ত রাউন্ডে প্রতিযোগীদের একটি প্রেশার টেস্টের মুখোমুখি হতে হয়। একইসঙ্গে তাদের একটি নয়, দুটি ডিশ বানাতে হয়। একটি স্যাভরি আইটেম, আরেকটি ডেসার্ট আইটেম। মিস্টেরি বক্স চ্যালেঞ্জে প্রতিযোগীদের নিজস্ব পরিচিত কিছু আইটেম দিয়েই ডিশ বানাতে বলা হয়।
মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ায় দ্বিতীয় রানার আপ (তৃতীয় স্থান) অর্জন করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ৩৮ বছর বয়সী কিশোয়ার চৌধুরী। মঙ্গলবার (১৩জুলাই) প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হয়।
এবারের আসরের মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন জাস্টিন নারায়ণ। প্রথম রানার-আপ হয়েছেন পিট ক্যাম্পবেল। জাস্টিন নারায়ণ চ্যাম্পিয়ন হয়ে পুরস্কার পেয়েছেন প্রায় এক কোটি ৬০ লাখ টাকা এবং মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার ২০২১ সালের খেতাব পেয়েছেন। দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী পিট ক্যামবেল জিতেছেন প্রায় ২০ লাখ টাকা। আর তৃতীয় হয়ে কিশোয়ার পেয়েছেন প্রায় ১৩ লাখ টাকা।
দুদিনের গ্র্যান্ড ফিনালের প্রথম দিনে ৫১ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন কিশোয়ার। অন্যদিকে ৫৩ পয়েন্টে শীর্ষে ছিলেন পিট আর ৫০ পয়েন্টে তৃতীয় ছিলেন জাস্টিন। দ্বিতীয় দিন শেষে ১১৪ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে থেকে সন্তুষ্ট থাকতে হয় কিশোয়ারকে। অন্যদিকে পিটও শীর্ষস্থান ধরে রাখতে পারেননি। তিনি ১২৪ পয়েন্ট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন। মাত্র এক পয়েন্ট বেশি পেয়ে চ্যাম্পিয়ন হন জাস্টিন।
কিশোয়ারের জনপ্রিয় রেসিপি
মাস্টারশেফ প্রতিযোগিতায় কিশোয়ারের যাত্রা শুরুর প্রথম ডিশ ছিল কাঁচা আমের ঝোল দিয়ে রান্না করা সার্ডিন, সাথে কালো মসুর ডাল, বিটরুট ও ব্লাড অরেঞ্জ ভর্তা।
কালাভুনা, ফুচকা-চটপটি, মাছের ঝোল, রাঙামাটি বারামুন্ডি কারিসহ আরও অনেক ঐতিহ্যবাহী ডিশ।
খো সুয়ের সঙ্গে ভ্যানিলা মিশিয়ে নতুন পদের খাবার রান্না করেছেন কিশোয়ার। বানিয়েছেন পার্সিয়ান অ্যান্ড ভ্যানিলা রোজেস নামে পিস্টাচিও কুলফি। আন্তর্জাতিক কুইজিন রান্নাতেও কিশোয়ার দক্ষতা দেখান।