জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে অনলাইনে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। দেশের উচ্চশিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতে এটি গুরুত্বপূর্ণ দিক বলে আমি মনে করি। অনলাইন শিক্ষকতায় এই প্রশিক্ষণ আরও বেশি কাজে লাগবে। কোভিডকালিন আমরা একটি ঢেউয়ের মধ্যদিয়ে যাচ্ছি। এমন সংকটের মধ্যে সম্ভাবনাও রয়েছে অনেক। সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও আমাদের অনলাইন এডুকেশন চলমান রয়েছে। এটাকে আরও জোরদার করতে হবে। শিক্ষার্থীরা যেন তাদের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারে।’ আজ সোমবার অনলাইন প্লাটফর্ম জুম অ্যাপের মাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত ‘অনলাইনে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন’ শীর্ষক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এম.পি.।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান এর সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ, শিক্ষাসচিব মো. মাহবুব হোসেন। দেশের উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘করোনা মহামারির মধ্যে শিক্ষাকার্যক্রম সচল রাখতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে হাজার হাজার লেকচার আপলোড করেছে। শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। মাল্ডিমিডিয়া ক্লাশ রুম চালুকরাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। অনলাইন শিক্ষা অব্যাহত রাখতে এসব খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।’
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে শিক্ষকরাই বাতিঘর। তারাই শিক্ষার্থীদের কাছে আদর্শ। প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে শিক্ষকরা এসব শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দেবেন। তারা শুধু শিখাবেন তা-ই নয়, তাদেরকে মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধে গুণান্বিত হতে হবে। তারা হবেন সত্যিকার অর্থেই আদর্শ শিক্ষক। তারা ঘটনাচক্রে শিক্ষক হবেন না, তাদেরকে শিক্ষকতা পেশাকে স্বপ্ন হিসেবে ধরেই আসতে হবে। তাহলেই আমরা কাঙ্ক্ষিত মান নিশ্চিত করতে পারবো।
’ বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, ‘শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে হলে আগে কোয়ালিটি শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষক নিয়োগে প্রভাব বন্ধ করতে হবে। “ম্যান বিহাইন্ড দ্য মেশিন” ভালো না হলে কোয়ালিটি নিশ্চিত হবে না।
’ সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ পরিচালনায় যে দর্শন রেখে গেছেন, কুদরাত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের যে বার্তা তিনি রেখে গেছেন, সংবিধানের যে মূলনীতি তিনি রেখে গেছেন- তার মধ্যেই রয়েছে আমাদের শিক্ষা ভাবনা কী হবে। সেই শিক্ষা দর্শনকে সামনে রেখে আধুনিক ও বিশ্ব উপযোগী শিক্ষার বিকাশে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আজকে কোভিডকালিন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় প্রযুক্তির যে ব্যবহার আমরা করছি, সেটির কারিগর আমাদের বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর যে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগান, সেই স্লোগানকে কেউ কেউ রাজনৈতিক বক্তব্য বললেও বাস্তবে আমরা অনুধাবন করি: এটি রাজনৈতিক কোন স্লোগান নয়, মূলত ডিজিটাল বাংলাদেশ উন্নয়ন, আধুনিক ও বিশ্ব উপযোগী হবার একটি পূর্বশর্ত । বিশ্বায়নের এই যুগে আমাদের বাঙালিরা যেন বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে কানেকটেড হতে পারে তার জন্য এটি আদর্শ। এ কারণেই আমরা কোভিডকালিন শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারছি।’
সভায় শিক্ষামন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন: হেয়ার রোডের ধলেশ্বরী থেকে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী তিনজন শিক্ষকের হাতে ট্যাব তুলে দেন। সভায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন, রেজিস্ট্রার, সিইডিপির প্রকল্প পরিচালক, শিক্ষক প্রশিক্ষণের কোর্স উপদেষ্টা, রিসোর্স পার্সন, প্রশিক্ষণার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরের বিভাগীয় প্রধানগণ সংযুক্ত ছিলেন।
দেশব্যাপী শিক্ষার মানোন্নয়নকল্পে গৃহীত কলেজ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (সিইডিপি) এর আওতায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজ শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে অনলাইনে এই শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।