উপমহাদেশের অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু ছিলেন শ্রেষ্ঠ মানুষ।
পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত লেখক অধ্যাপক ভবতোষ দত্তের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘আট দশক’-এ প্রথমেই পেয়ে যাই। হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক তখনকার পরিস্থিতিতে এমন যে ভালো ছিল তা কিন্তু নয়। অসাম্প্রদায়িক মানুষই যে কীভাবে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে সম্প্রীতি গড়ে তুলতে পারেন তার উদাহরণ ছিলেন ইসলামিয়া কলেজের তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান।
অধ্যাপক ভবতোষ দত্ত আরো লিখেছেন,আমরা মুসলমান নই বলে যেন কোনো আঘাত না পাই তারও চেষ্টা করতেন। প্রায় সব ছাত্রই অবশ্য লীগ-পন্থি। পাকিস্তানকামী। মুসলমান শিক্ষকেরাও তাই। তবে কলেজ ইউনিয়নের নির্বাচনে দুটো দল হতো—একটি বাংলাভাষীর দল আর অন্যটি উর্দুভাষীর দল। উর্দুভাষীরা নিজেদের একটু বেশি কুলীন মনে করতেন। কিন্তু বাংলাভাষীদের সংখ্যা ছিল বেশি।
শেখ মুজিবুর রহমান ছিল একটি কৃষকায় ছেলে এই বাংলাভাষী দলের নেতা। তার নীতি শেষ পর্যন্ত অপরিবর্তিত ছিল। বঙ্গবন্ধু মুজিবুর বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে সফল হয়েছিলেন। ইসলামিয়ার ছাত্ররা যে আমাদের জন্য কতটা করতে পারত তার প্রমাণ পেলাম ১৯৪৬-এর রক্তাক্ত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময়। বালিগঞ্জ থেকে ইসলামিয়া কলেজের রাস্তায় পদে পদে বিপদে। এই রাস্তা আমাদের ছাত্ররা পার করে দিত। ওল্ড বালিগঞ্জের কাছে অপেক্ষা করত আর সেখান থেকে জয়লেসলি স্ট্রীট কলেজে নিয়ে যেত। আবার সেভাবেই ফিরিয়ে দিয়ে যেত।
১৯৭২ সালে ২৩ মার্চ তারিখের ঢাকায় এক সুধী সমাবেশে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতায় দক্ষিণ এশিয়া উপমহাদেশে মূল ব্যাধি চিহ্নিত করে বলেন, উপমহাদেশের গত কয়েক যুগের রাজনৈতিক অস্থিরতা, দারিদ্র্য ও দুর্ভোগের মূল কারণ সাম্প্রদায়িকতা।১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ ভাগ হওয়ার পর ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতাকে রাষ্ট্রীয় সাম্প্রদায়িকতায় রূপ দেওয়া হয়েছে।