সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির গ্রীন রোডের ক্যাম্পাস অডিটোরিয়ামে বুধবার (২৯ মার্চ) মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা, রচনা ও কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরষ্কার বিতরণী এবং ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস সম্পর্কে গঠনমূলক বক্তব্য দেন প্রধান অতিথি সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. মো: আবুল বাশার, বিশেষ অতিথি উপ-উপাচার্য প্রফেসর শামীম আরা হাসান। অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন প্রাক্তন ট্রেজারার ও ব্যবসায় প্রশাসনের প্রফেসর মো: আল-আমিন মোল্লা। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাধীনতা দিবসের স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মো: ওমর ফারুক মোল্লা। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান প্রফেসর মো: মোস্তফা হোসেন এবং সঞ্চালক হিসেবে ছিলেন রেজিস্ট্রার এস, এম, নূরুল হুদা।

উপাচার্য প্রফেসর ড. মো: আবুল বাশার বক্তব্যের শুরুতে স্বাধীনতার মহান স্থপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবন দিয়ে আমাদের বাংলাদেশ নামক একটি দেশ উপহার দিয়েছেন তাদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে বলেন, দীর্ঘ নয় মাস রক্তাক্ত যুদ্ধের পর আর ৩০ লক্ষ মা বোন ও শহীদদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা ফিরে পেয়েছি আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা। তিনি আরও বলেন, যাদের রক্ত ও জীবনের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা ও সব ধরনের অধিকার, তাদেরকে আমরা কখনও ভুলব না। তাদের নাম ইতিহাসের পাতায় চিরকাল লেখা থাকবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য প্রফেসর শামীম আরা হাসান প্রথমেই শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন মুক্তিযুদ্ধের মহান শহীদদের ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যাদের আত্মত্যাগ ও জীবন বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। তিনি বলেন, পরাধীনতা ও স্বাধীনতা দুটি ভিন্নমাত্রিক শব্দ। পরাধীনতার লাঞ্ছনা ও বঞ্চনার পর স্বাধীনতার অর্জন ও আনন্দ যে কি, তা যারা পেয়েছেন তারাই জানেন এ শব্দ দুটোর তারতম্যের বৈশিষ্ট্য। যারা জন্মসূত্রে স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করেছেন তাদের জানা দরকার এ অর্জনের পিছনের ইতিহাস ও আত্মত্যাগের গল্প। এই ইতিহাস জানার জন্য স্কুল জীবন থেকে পাঠ্যপুস্তক রয়েছে, কলেজ ও ইউনিভার্সিটিতে বিভিন্ন বিষয়, নানা ধরনের গ্রন্থ ও ডকুমেন্টারির বিশাল ভান্ডার রয়েছে। তবে স্বল্প পরিসরে এ আলোচনা সম্ভব নয়। আজ শুধু আমাদের আত্মসচেতনতা, আনন্দের উপলব্ধি সবার মাঝে যে উজ্জীবন করে, তা বারংবার মনের মাঝে স্বাধীনতার অর্জন ও তার পেছনের ত্যাগ, বিসর্জনের ও বেদনার মর্মকে ধারণ করতে পারার  লক্ষ্যের কথাও আমাদের প্রজন্মকে মনে করিয়ে দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমনের বিরুদ্ধে অবরোধ গড়ে তুলে, যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধের পর ৩০ লাখ শহীদের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হয়। আর তাই আজ আমরা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে স্বাধীন দেশে নি:শ্বাস নিতে পারছি আর চিৎকার করে বলতে পারছি আমরা স্বাধীন।

অনুষ্ঠানের সভাপতি প্রাক্তন ট্রেজারার ও ব্যবসায় প্রশাসনের প্রফেসর মো: আল-আমিন মোল্লা কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে এবং স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি ও বাংলা মায়ের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পাকিস্তান ও ভারত বিভাগের ইতিহাস তুলে ধরে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের কথা উপস্থিতদের মাঝে তুলে ধরেন। বাঙ্গালী জাতির গৌরবজ্জ্বল ইতিহাসের কথা স্মরণ করে তিনি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ও ২৫ মার্চের কালরাতে পাকবাহিনীর অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে নারকীয় হত্যাকান্ডের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে বলেন, দীর্ঘ নয় মাসের মুক্তিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হয়। তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার মর্ম সবাইকে উপলব্ধি করতে হবে। কেননা স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন।

দিনব্যাপী রচনা ও কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন বিভাগের প্রায় শতাধীক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। এর মধ্য থেকে রচনা প্রতিযোগিতায় ১১ জনকে এবং কবিতা আবৃত্তিতে ৮ জনকে শ্রেষ্ঠ প্রতিযোগি হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।

রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীরা হলেন- ইয়ানূর ঝুমকী, মো: ইয়ামিন, সুমাইয়া জাহান, মো: মনির হোসেন, রাফিয়া আসমা ইভা, রেশমা আক্তার, ইমন ইসলাম, নুসরাত জাহান বৃষ্টি, শ্রাবনী বর্মন, কাশফিয়া কাজী ও মেহরাব হোসেন।

কবিতা আবৃত্তিতে বিজয়ীরা হলেন- ফাহিম মুনতাসির, ইয়ানূর ঝুমকী, মেহরাব হোসেন, ইমন ইসলাম, নূর মোহাম্মদ , কাজী আসাদুর রহমান, মো: ইয়ামিন ও মো: মনির হোসেন। পরে নির্বাচিতদের সার্টিফিকেট ও ক্রেস্ট দিয়ে পুরষ্কৃত করা হয়। দোয়া ও ইফতার মাহফিলের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে