বর্ণাঢ্য আয়োজনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২৩ উদযাপন করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। গত ৮ মার্চ রাজধানীর ধানমন্ডিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর কার্যালয়ে এই অনুষ্ঠান পালন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি। বিকাল ৫টায় শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পেশায় প্রতিষ্ঠিত নারী নেতৃত্ব উপস্থিত ছিলেন। শান্তির পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী। এছাড়া রাতে নারী জাগরণের গান পরিবেশন করে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘নারী দিবস প্রতিদিনই। পৃথিবীতে এমন কোনো কিছু নেই যেটা নারী ছাড়া হয়। নারীদের জড়তার জায়গাটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের নারীদেরকে হাত ধরে এগিয়ে দিয়েছেন একজন শেখ হাসিনা। এখন আমাদের কাজটা করে যেতে হবে। ছোট বেলা থেকে আমাদের চারপাশে শক্ত-পোক্ত যে দেয়ালগুলো তৈরি করা হয়েছে, সেগুলো ভেঙে চুড়ে বের হয়ে আসতে হবে। এই যুদ্ধটা আসলেই নারীর জন্য সবচেয়ে বড় যুদ্ধ। সেটাতে জয়ী হওয়ার পরেও স্কাই ইজ দ্যা লিমিট। নারী যে পথে হাঁটবে, সে পথ কিন্তু কুসুমাস্তীর্ণ নয়। সে কারণে এই ডিজিটাল পথেও নারীর বাঁধা বিপত্তি অনেক। কিন্তু তাকে ডিজিটাল হতেই হবে। প্রযুক্তি শিখতে হবে। কারণ এটি এমন একটা জায়গা সেখানে নারী-পুরুষ খুব বেশি মেটার করে না।’
এখন বিশ্বটাই হচ্ছে প্রযুক্তি উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘প্রযুক্তি নারীকে শিখতেই হবে। কারণ এই বিশ্বটাতেও নারীকে নিজের জায়গা করে নিতে হবে। নারী-পুরুষ সকল মানুষের বৈষম্য দূর করতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। বঞ্চনাহীন, শোষণহীন একটি বাংলাদেশ তৈরি করতে চেয়েছিলেন তিনি। তাঁর প্রতি এই নারী দিবসে শ্রদ্ধা।’
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘সামাজিক অনুশাসনের বহু কিছু যখন ভেঙে পড়ে, তখন নারী শাসন-স্নেহ সমাজের অগ্রসরতা ও উন্নয়নের পথ দেখায়। সুতরাং নারীর ভূমিকা যে শুধু মাতৃত্বে সেটি নয়। নারীর ভূমিকা আজ নেতৃত্বে, সৃজনশীলতায় ও দক্ষতায় সুপ্রতিষ্ঠিত। আমাদের নারী দিবসের বার্তা হবে সমভাবে ক্ষমতায়ন নয়, বরং নারী যেন আরও অধিক ক্ষমতায়ন হয়। তাহলে সমাজ আরও বেশি অগ্রসর হবে সেটিই প্রমাণিত। সে কারণে এটি শুধুমাত্র পাওয়ার স্ট্রাকচার দিয়ে দেখার বিষয় নয়। বরং তার যে যোগ্যতার জায়গা সেই যোগ্যতম জায়গাটিতে তিনি যেন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, তেমন সামাজিক সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। তাহলে নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন সম্ভব হবে। আমরা নারী-পুরুষ ভেদাভেদের মধ্যদিয়ে নয় বরং মানুষ হিসেবে সহযাত্রীর পথকে অবারিত করে যেন মুক্ত পৃথিবী, আধুনিক বাংলাদেশ, অগ্রসর সমাজ তৈরি করতে পারি।’
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এই বাংলাদেশ সৃষ্টি না হলে নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হতো না উল্লেখ করে উপাচার্য ড. মশিউর রহমান আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন না হলে নারী মুক্তির আস্বাদন থেকে আমরা হয়তো আজও দূরে থাকতাম। সেকারণে বাঙালির গেরিলা যোদ্ধারা আজও অর্থনৈতিক মুক্তির গেরিলা সংগ্রামী। যেখানেই জঙ্গিবাদ, যেখানে নারী নির্যাতন, যেখানে অশুভ কিছু- তার বিরুদ্ধে সুন্দরের সকল শক্তি দিয়ে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তোলায় আমরা দূর প্রতিজ্ঞ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে ‘ভাইয়েরা আমার’ বলে সকল নারী-পুরুষ-কৃষক-শ্রমিক সব শ্রেণি পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। তিনি নারী-পুরুষে ভেদাভেদ না করে ভাইয়েরা আমার শব্দটির মধ্যে সকলকে এক সূতায় বেঁধেছেন, সাড়ে সাতকোটি বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। নারী দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হোক- নারী মুক্তির জায়গায় আমরা সকলে মিলে কাজ করবো। আধুনিক, অগ্রসর বাংলাদেশ তৈরি করবার জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নিরলস পরিশ্রম করে প্রিয় মাতৃভূমিকে গড়ে তুলবো।’
নারী দিবসের আয়োজনে আরও বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য আরমা দত্ত, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. নাসিমা বানু, উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহবুবা নাসরিন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, অভিনেত্রী তারিন জাহানসহ দেশের বিভিন্ন পেশায় প্রতিষ্ঠিত নারী নেতৃত্ব। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, দপ্তর প্রধান, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন।