একুশে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাংলা ভাষার দাবিতে প্রাণদানের গৌরবোজ্জ্বল মাতৃভাষা আন্দোলনের ৭১ বছর পূর্ণ হলো।  ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি “বাংলাকে” রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বাংলার ছাত্র ও যুবসমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর চোখ-রাঙ্গানি ও প্রশাসনের ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে আসেন। মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ছাত্র-জনতার মিছিলে সেদিন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর পুলিশ গুলি চালালে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিক গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ হন।

রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র গ্রীন রোডে অবস্থিত সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে আজ বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে এসইউ আয়োজিত রচনা প্রতিযোগীতার পুরষ্কার ও সার্টিফিকেট বিতরণী অনুষ্ঠানে এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ সব কথা তুলে ধরেন।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আবুল বাশার।

অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন এসইউ’র প্রাক্তন ট্রেজারার ও ব্যবসায় প্রশাসনের প্রফেসর মো: আল-আমিন মোল্লা।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. এম এ মাবুদ, এসইউ’র ব্যবসায় অনুষদের ডিন প্রফেসর আবুল কালাম ও রেজিস্ট্রার এস, এম, নূরুল হুদা।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করে স্বাগত বক্তব্য দেন এসইউ’র  ছাত্র কল্যাণ দপ্তরের পরিচালক কাজী জুলকারনাইন সুলতান আলম।

অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আবুল বাশার ২১ ফেব্রুয়ারির ইতিহাস উপস্থিতদের মাঝে তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ দিনটিকে ছুটির দিন ঘোষণা করা হয়। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। সেই সাথে তিনি দেশের সাথে সম্পর্কিত ডকুমেন্টগুলো বাংলা ভাষায় করার কথা বলেন।

অনুষ্ঠানের সভাপতি প্রাক্তন ট্রেজারার ও ব্যবসায় প্রশাসনের প্রফেসর মো: আল-আমিন মোল্লা যারা ভাষার জন্য শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, বাংলা ভাষার মর্যাদা যাতে ক্ষুন্ন না হয় সেদিকে সবার সতর্ক দৃষ্টি রাখা উচিত।

কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. এম এ মাবুদ বলেন, আজকের অনুষ্ঠানটি আমাদের অতীতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। বাংলা ভাষাকে সংরক্ষণ করার দায়িত্ব ভাষাভাষীদের। ভাষা হলো চেতনা। ভাষাভাষীদের মধ্যে বাংলা ভাষার চেতনা জাগ্রত ও বাংলা ভাষাকে লালন ও ধারন করতে হবে।

ব্যবসায় অনুষদের ডিন প্রফেসর আবুল কালাম তার ছাত্রজীবনের অভিজ্ঞতার কথা উপস্থিতদের মাঝে তুলে ধরে বলেন, প্রকৃত  শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হলে আমাদের মাতৃভাষায় অর্থাৎ বাংলা ভাষায় শিক্ষিত হতে হবে।

রেজিস্ট্রার এস, এম, নূরুল হুদা বলেন, ৭১ বছর আগে মাতৃভাষার জন্য সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিকসহ যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। তিনি সংক্ষিপ্তভাবে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ইতিহাস ও তার তাৎপর্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দিনটি বাঙ্গালী জাতির জন্য গৌরবের দিন।

অনুষ্ঠানের ২য় পর্বে সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ও বাঙ্গালী জাতির ইতিহাসে বায়ান্ন-এর ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক রচনা প্রতিযোগীতায় ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন বিভাগের শতাধীক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে মূল্যায়নের ভিত্তিতে ১১ জনকে মনোনীত করা হয়। মনোনীত ১১ জনের মধ্যে প্রথম ৩ জনকে পুরষ্কার ও সার্টিফিকেট দেয়া হয়। রচনা প্রতিযোগীতায় প্রথম ইয়ানূর ঝুমকী, দ্বিতীয় নুসরাত জাহান বৃষ্টি ও তৃতীয় হন জিনিয়া পারভীন। মনোনীত পরের ৮ জনকে সার্টিফিকেট দেয়া হয়। প্রতিযোগীতায় বিজয়ী সার্টিফিকেটপ্রাপ্তরা হলেন- অনিন্দ্য বিশ্বাস, সুনীতি মন্ডল, মো: আবু সালিম তৌহিদ, মুক্তা আক্তার, মো: মনির হোসেন, স্বর্নালী আক্তার, হেনা খাতুন, বৃষ্টি খাতুন। বিজয়ীদের হাতে পুরষ্কার ও সার্টিফিকেট তুলে দেন সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আবুল বাশার ও অন্যান্যরা।

অনুষ্ঠানে সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে