দেশের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি) ১৯৯১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ও আইবিএর সাবেক পরিচালক শিক্ষাবিদ ড. এম আলিমউল্যা মিয়ানের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়। আইইউবিএটির ৬ষ্ঠ সমাবর্তন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গত ১৯ জুলাই (মঙ্গলবার) অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবর্তনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি প্রদান করা হয়। কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জনকারী চার শিক্ষার্থীকে আইইউবিএটির  প্রতিষ্ঠাতা মিয়ান স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। সমাবর্তনে কৃষি, ব্যবসায়, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক, সিভিল, কম্পিউটার, মেকানিক্যাল, ইকনোমিক্স, টুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি এবং নার্সিং বিষয়ে ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের প্রতিনিধি হিসেবে সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সমাবর্তনে মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জর্জিয়ার ককেশাস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট এবং ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটি প্রেসিডেন্টস-এর বোর্ড চেয়ারম্যান  অধ্যাপক ড.  কখা শেঞ্জেলিয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন  শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং আইএসি যুক্তরাজ্যের রেসিডেন্ট জাজ ও ফিনল্যান্ডের অনারারি কনসুল জুলিয়ান ফিলিপস।

বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আইইউবিএটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান জুবের আলিম। নতুন গ্র্যাজুয়েটদের সাধুবাদ জানিয়ে তিনি পরিশ্রম ও সততার মাধ্যমে মাতৃভূমির উৎকর্ষ সাধনে তাদের কাজ করার আহ্বান জনান।

সভাপতির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার খোলননচে বদলে ফেলছি। এখন শিক্ষায় পরিবর্তন ও সংস্কারের কথা বলছি না ট্রান্সফরমেশনের কথা বলছি। শিক্ষার্থীদের করে করে শিখতে হবে। অথচ ব্যাপক অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে-সমস্ত শ্রেণির পাঠ্যসূচি থেকে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত সব কিছু বাদ দেওয়া হচ্ছে। আপনাদের অনুরোধ করবো গুজবে কান দেবেন না। সত্যতা যাচাই করুন। দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে এটি আমাদের সবারই করণীয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে আমাদের অনেক বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে।

অনুষ্ঠানে উচ্চশিক্ষা প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘গ্র্যাজুয়েটদের যে প্রত্যাশা আর চাকরি দাতাদের যে প্রত্যাশা এ দুয়ের মধ্যে বিস্তর ফরাক। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের সফট স্কিল দিতে পারছে না এখনও। সে কারণে আমাদের শিক্ষার্থীরা খুব ভালো পড়াশোনা করছে, মেধাবী, ডিগ্রি অর্জন করছে কিন্তু আশপাশের অনেক দেশের শিক্ষার্থীদের তুলনায় আমাদের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ছে। প্রতিবেশি অনেক দেশের শিক্ষার্থীরা হয়ত এতো বেশি লেখাপড়া না করেও সফট স্কিল অর্জন করায় তাদের চাকরির ক্ষেত্রে অফার করা হচ্ছে। কাজেই আমাদের খুব জরুরি কাজ যা করতে হবে ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাকাডেমিয়া লিংকেজ, কোনও কোনও বিশ্ববিদ্যালয় শুরু করেছে সবাকেই করতে হবে। কর্ম জগতে কী প্রয়োজন সেটি জানতে হবে, আর তাহলে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে তৈরি হবে। আমরা কমিউনিকেশন স্কিলস, কোলাবরেশন স্কিলস, প্রব্লেম সলভিং স্কিলসসহ নানা রকমের স্কিলস জানতে হবে। ওয়াল্ড ইকোনমিক ফোরামের গবেষণা বলছে— সেকেন্ডারি স্কুলে যদি কোলাবরেটিং, প্রব্লেম সলভিং স্কিল শেখানো যায় তাহলে বিশ্ব অর্থনীতিতে ২ দশমিক ৪৫ ট্রিলিয়ন ডলার যুক্ত করবে। আমরা মাধ্যমিক পর্যায় থেকে শুরু করার চেষ্টা করছি। কিন্তু যারা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পার করে এসেছে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সেটি শেখাতে হবে।

শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি খুব জ্ঞান অর্জন করলাম, দক্ষতা অর্জন করলাম, সফট স্কিল অর্জন করলাম। কিন্তু আমার মূল্যবোধ না থাকে সততা, নিষ্ঠা, মানবিকতা, সহমর্মিতা অসাম্প্রদায়িকতা দেশপ্রেম যদি না থাকে তাহলে খুব ভালো করলাম না। এই কাজগুলো আমাদের শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ হতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় যেভাবে ডিগ্রিগুলো অর্গানাইজড আছে তা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। আমাদের মডিউলার এডুকেশনে যাবার কথা। সামনে যে দিন আসছে যেভাবে দ্রুত পৃথিবী পরিবর্তন হচ্ছে তাতে আজ যে ডিগ্রি অর্জন করে যাচ্ছেন পাঁচ বছর পর তা আর প্রয়োজন নাও হতে পারে। সে জন্য রিস্কিল করতে হবে, আপস্কিল করতে হবে। ’

সমাবর্তন বক্তা অধ্যাপক ড. কখা শেঞ্জেলিয়া বলেন, একবিংশ শতাব্দীর জ্ঞানভিত্তিক সমাজে জ্ঞানই সঞ্চালক আর সততাই পৃথিবীর অন্যতম সম্পদ। এ সময়ের অফুরন্ত সুবিধা ও অসুবিধা এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অভূতপূর্ব প্রতিযোগিতা, যার মুখোমুখি আমরা কখনই হইনি তার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জুলিয়ান ফিলিপস আইইউবিএটির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. মিয়ানের সুদুপ্রসারী পদক্ষেপ এবং আইইউবিএটির উত্তরোত্তর অগ্রগতির প্রসংসা করেন।

সমাবর্তনে স্বাগত বক্তব্যে আইইউবিএটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুর রব বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রাম থেকে পেশামুখি গ্র্যাজুয়েট তৈরির ক্ষেত্রে আইইউবিএটির প্রত্যয় তুলে ধরেন  এবং এই প্রত্যয়ের আওতায় দেশের প্রায় সকল জেলা, উপজেলা থেকে গ্র্যাজুয়েট তৈরি ও চাকরি এবং নতুন উদ্যোগে গ্র্যাজুয়েটদের সফলতা তুলে ধরেন।  সমাবর্তনে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বক্তব্য রাখেন আইইউবিএটির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. হামিদা আখতার বেগম।

সমাবর্তনে ভ্যালেডিকটরি বক্তব্য রাখেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং গোল্ড মেডালিষ্ট গ্র্যাজুয়েট আবু বকর সিদ্দিক।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে