একটি দেশের প্রধান শক্তিই হচ্ছে মেধাসম্পন্ন, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও উন্নত আদর্শ সমৃদ্ধ একটি জাতি। আর আর তাই দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সেই লক্ষ্যে অর্জন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেছিল ১৯৭১ সালে বিশ্বের মানচিত্রে যুক্ত হওয়া লাল সবুজের বাংলাদেশের নীতি নির্ধারকরা। ১৯৭৩ সালের ১৫ ই ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির ১০নম্বর আদেশে ভূতাপেক্ষ কার্যকারিতা প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রথম বিজয় দিবসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ  বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ জানিয়ে দেয় উচ্চ শিক্ষা এবং মোটা দাগে শিক্ষা নিয়ে দেশের অবস্থান। ১৯৭৩ সালে মাত্র ৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে যাত্রা শুরু। এরপর উচ্চ শিক্ষার দুর্বার গতি একটুও থেমে থাকেনি। সর্বশেষ জরিপ (২০২০) বলছে, দেশের বর্তমানে পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৫৭টি। এই জরিপের পরেও আরো দু’টি জেলায় ৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সে হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা হবে ১৬০টি।
শিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ৪৬ লাখ ৯০ হাজার ৮৭৬ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে এই উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত লেখাপড়া করা মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ কোটি ৯০ লাখ। খুব সহজেই বোঝা যায় শিক্ষা খাতকে এগিয়ে নেয়ার জন্য কার্পণ্য করেনি কোন সরকার।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাথাপিছু ব্যয়ও প্রতি বছর বাড়ছে। অর্থাৎ সরকারের বরাদ্দ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯ হাজার ৩৮৩ জন শিক্ষার্থীর প্রত্যেকের পেছনে সরকারের ব্যয় হয়েছে ২১ হাজার ২৩৮ টাকা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ হাজার ৯২৯ জন শিক্ষার্থীর মাথাপিছু ব্যয় ১ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ হাজার ৮৮০ জন শিক্ষার্থীর মাথাপিছু ব্যয় ৩ লাখ ৪২ হাজার টাকা। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ হাজার ৭৭০ শিক্ষার্থীর মাথাপিছু ব্যয় ২ লাখ ১১ হাজার টাকা। ৫ লাখ ৬৬ হাজার ১৬২ টাকা মাথাপিছু ব্যয় হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ৫৮২ জন শিক্ষার্থীর জন্য। ২০২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়মঞ্জুরি কমিশনের যে প্রতিবেদন সেখানেই সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাথাপিছু যে খরচ দেখানো হয়েছে তা থেকে কয়েকটি তুলে ধরলাম মাত্র। এই প্রসঙ্গের অবতারণা করা হয়েছে এই কারণে যে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার জন্য যে খরচ সেটি হয় সরকার দেয় অথবা সেরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজে বহন করে। তাই আমরা যখন বলি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মাসে মাত্র ২৫ টাকা খরচ করে লেখাপড়া করা যায়, তখন কথাটি সত্য থাকে না, মিথ্যা হয়ে যায়।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া করতে লাখ লাখ টাকা খরচ হয় শিক্ষার্থীদের। তবে যেহেতু সম্পূর্ণ ব্যয় সরকার বহন করে তাই অভিভাবকদের কোনো চাপ থাকে না। এর সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী প্রতি মাথাপিছু ব্যয় কয়েক লক্ষ টাকা, যার পুরোটাই বহন করতে হয় অভিভাবকদের।
বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় সরকারি আইন মেনে। নির্ধারিত জমি, শিক্ষার্থী প্রতি যথেষ্ট স্পেস (বসার পর্র্যাপ্ত ব্যবস্থা), ব্যাংকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থসহ নানা নিয়ম-কানুন মানতে হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যারা প্রতিষ্ঠা করেন সেসব উদ্যোক্তাদের। তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সরকারি খরচ নেই বললেই চলে। ২০২০ সালের ১৮ মার্চ করোনার প্রভাবের কারণে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। দেড় বছর পর ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবারও কার্যক্রম শুরু করে। এই সময়টিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রয়োজন ছিল সরকারি প্রণোদনার। কিন্তু সেটা আমরা দেখতে পাইনি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার প্রথম কয়েক মাস উদ্যোক্তারা ভালোভাবে আর্থিক দিক গুলো সামাল দিতে পারলেও পরে বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ব্যর্থ হয়েছে। অনেক শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী বেতন পাননি, কেউ পেয়েছেন আংশিক। অনেক শিক্ষার্থী টিউশন ফি দিতে ব্যর্থ হয়েছে। অথচ এই সময়ে পোশাক খাতে কয়েক হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দিয়েছে সরকার। শ্রমিকদের বেতন দিতেও দেয়া হয়েছে সুদ ছাড়া প্রণোদনা। কৃষিসহ আরো নানা খাতের মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে উাহরণ সৃষ্টি করেছে সরকার।

লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ এডুশেন রিপোর্টার্স ফোরাম

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে