বিশ্বাস হচ্ছে না। খবরটি শুনে এই কথাটিই বলতে হচ্ছে সবাইকে। ক্রিকেটের খুব সাধারণ এক সমর্থক কিংবা ক্রিকেট কিংবদন্তি; শেন ওয়ার্নের মৃত্যুর খবর শুনে কারও পক্ষে আর কিছু বলা কঠিন। মাত্র ১২ ঘণ্টা আগে পূর্বসূরি রড মার্শকে নিয়ে টুইট করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি। থাইল্যান্ডে ছুটি কাটাচ্ছেন। গত কিছুদিন অন্তত তাঁর শারীরিক কোনো অস্বস্তির কথা কেউ শোনেনি। এ অবস্থায় যখন খবর আসে, লেগ স্পিন শিল্পকে ক্রিকেটে স্থায়ী করে দেওয়া মানুষটি আর নেই, সেটা বিশ্বাস করা আসলেই কঠিন। ধারণা করা হচ্ছে, হার্ট অ্যাটাকের শিকার হয়ে মারা গেছেন অস্ট্রেলিয়ান লেগ স্পিন কিংবদন্তি।

কদিন আগেই নিজেকে আরও ফিট করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ নিয়ে কাজও শুরু করেছেন। সে মানুষটা আচমকা হার্ট অ্যাটাক করে কাউকে কোনো সুযোগ না দিয়ে অন্যলোকে চলে যাবেন, এটা শুনলে অবিশ্বাস তো জাগবেই। তাঁর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে হার্ট অ্যাটাকের কথাই বলা হয়েছে। ৫২ বছর বয়সে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এ লেগ স্পিনার মারা গেছেন বলে জানিয়েছে ফক্স ক্রিকেট।

কোনো না কোনো সূত্রে খবরটা পাওয়ার পর মনে মনে এই প্রার্থনা করতে করতেই ইন্টারনেটে ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্রিকেট প্রেমীরা। খবরটা যেন ভুল হয়, খবরটা যেন ভুল হয়। তা তো হয়ইনি, বরং কিছুক্ষণের মধ্যেই সব সংশয় ঘুচিয়ে দিয়েছে কিংবদন্তির বিদায়শোকে ভেসে যাওয়া টুইটার-ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম। সবাইকে মেনে নিতে হয়েছে অবিশ্বাস্য সত্যিটা, সর্বকালের সেরা লেগ স্পিনার আর নেই।

মাইক গ্যাটিংকে আউট করা ওয়ার্নের সেই বলটিকে বলা হয় বল অফ দ্য সেঞ্চুরি। শুধু ১০০ বছর নয়, আগামী ১০০০ বছরে এমন বল আর দ্বিতীয়বার দেখার সম্ভাবনাও খুবই কম। টেস্ট ক্রিকেটে ৭০৮ এবং ওয়ানডে ক্রিকেটে ২৯৩ উইকেট নেয়া শেন ওয়ার্নের শুরুটা ১৯৯২ সালে। লেগ স্পিনের মত কঠিনেরে আপন করে ১৫ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে খেতাব পেয়েছেন কিং অফ স্পিনের। খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ার শেষে ধারাভাষ্য এবং ক্রিকেট বিশ্লেষণেও সুনাম কুড়িয়েছেন ঠোঁটকাটা শেন ওয়ার্ন।

১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল ওয়ার্নের। হয়েছিলেন সেমিফাইনাল ও ফাইনালের ম্যাচসেরা। ফ্যাঞ্চাইজি লিগ আইপিএলের প্রথম সফল অধিনায়কও ছিলেন এই ওয়ার্ন। ২০০৮ সালে তার অধীনেই চ্যাম্পিয়ন হয় রাজস্থান রয়্যালস।

ওয়ার্ন টেস্টে এক ক্যালেন্ডার বর্ষে সর্বোচ্চ ৯৬ উইকেট শিকারের নজির গড়েছেন। সেঞ্চুরি ছাড়া সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের মধ্যেও সবার শীর্ষেই তিনি। এছাড়া ক্যারিয়ার জুড়ে জাতীয় দলের হয়ে ৪ হাজার ১৭২ রান করেছেন এই জাদুকর। টেস্টেও সেঞ্চুরি ছাড়া সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের মধ্যে ওয়ার্নের নাম সবার শীর্ষে। অভিজাত ক্রিকেটে তিনি করেছেন ৩ হাজার ১৫৪ রান।

ক্রিকেটের কিংবদন্তিদের সংক্ষিপ্ততম তালিকায় তো তাঁর নামও থাকবে, হাজারো তরুণের অনুপ্রেরণা তো তিনিও। লেগ স্পিনকে শিল্পের পর্যায়ে পাকিস্তানের আবদুল কাদির নিয়ে গেছেন ঠিকই, কিন্তু এই শিল্পকেই তরুণদের হৃদয়ে গেঁথে দেওয়ার কৃতিত্ব তো সোনালি চুলের অস্ট্রেলিয়ানেরই! বিদায় কিংবদন্তী, বিদায় কিং অফ স্পিন।
জন্ম: সেপ্টেম্বর ১৩, ১৯৬৯, ফার্নট্রি গালি, ভিক্টোরিয়া।
মৃত্যু: মার্চ ৪, ২০২২। কোহ্ সামুই, থাইল্যান্ড (৫২ বছর ১৭২ দিন)।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে