জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক’ প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ বলেছেন, ‘বাঙালির হাজার বছরের আশা-আকাঙ্খাক্ষা ও স্বপ্নের নায়ক হলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ছিলেন এদেশের গরিব, দুঃখী, নির্যাতিত, বঞ্চিত, মেহনতি মানুষের আপনজন। মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়েও তিনি বলেছেন আমার প্রিয়জন হচ্ছে এদেশের সাধারণ মানুষ। তারাই আমার আপনজন।’

বুধবার (২৫ আগস্ট) রাতে ভার্চুয়াল প্লাটফর্ম জুম অ্যাপসের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গীভূত বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউট আয়োজিত জাতীয় শোক দিবস-২০২১ উপলক্ষে ‘বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রভাবনা ও স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা’ শীর্ষক একক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বিশিষ্ট এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী।

প্রথিতযশা এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, ‘২৩-২৪ বছরে একটি জাতিরাষ্ট্র কখনোই প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে না। এর পেছনে থাকে সুদীর্ঘ আন্দোলন, সংগ্রাম এবং স্বপ্নের ইতিহাস। শুধু হাজার বছর নয়, ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার বছরের ভাষা, জাতিসত্ত্বা গঠন এবং ভৌগোলিক অবস্থান বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে এই জনপদের আশা-আকাঙ্খাক্ষা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন একমাত্র বঙ্গবন্ধুই। যে কারণে একটি জাতিগঠনে নেতৃত্ব দিয়ে সফল হয়েছিলেন। তিনি শুধু বাঙালির নেতাই ছিলেন না, বিশ্বমানবতার নেতা হিসেবে তিনি আসীন হয়েছিলেন। হি ওয়াজ অ্যা বর্ন লিডার।’

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের কাপুরুষ উল্লেখ করে ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে যারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মম-নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে তারা নামে, চেহারায় যাহাই হোক চিন্তা-ভাবনা-চেতনায় তারা পাকিস্তানি। এদেশের সাধারণ মানুষ তাদেরকে সবসময় ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করে।’

প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকলেও ১৯৪৭ সালের প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান তাঁর রাষ্ট্রভাবনায় ছিল না। তাঁর রাষ্ট্রভাবনায় ছিল ভারতের পূর্বাঞ্চলে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। সেই লক্ষ্যকে ধারণ করেই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে ১৯৪৭ সাল থেকেই তিনি বাঙালির জাতীয় মুক্তির সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ‘৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট, ‘৬৬ এর ৬ দফা ‘৭০ এর নির্বাচন এবং ‘৭১ এর অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যদিয়ে বাঙালি জাতিকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ করে অবশেষে প্রতিষ্ঠা করেন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। যে রাষ্ট্র ধারণা তিনি বহু পূর্ব থেকেই লালন করে আসছেন।’

সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু আমাদের প্রেরণার বাতিঘর। আমরা যখন মনোবল হারিয়ে ফেলি মনোবল খুঁজে নিতে বঙ্গবন্ধুর কাছে ফিরে যাই। এটি একজন ক্যারিশমেটিক লিডারের প্রভাব। এ কারণেই পৃথিবীর রাজনৈতিক আদর্শে এক অনন্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন বঙ্গবন্ধু। সেজন্যেই একজন ক্যারিশমেটিক লিডারের চেতনা এবং আদর্শকে হত্যা করা যায় না।’

উপাচার্য বলেন, ‘আজকে যারা আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থানে আনন্দিত হয়, তাদের উদ্দেশ্যে বলবো- ভিন্ন আদলে গড়া বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ এবং সমাজতান্ত্রিক ধারায় ১৯৭২ এর সংবিধান বঙ্গবন্ধু যেভাবে রচনা করেছেন সেই বাংলাদেশ শুধু আধুনিক হতে পারে, উন্নত ও অগ্রসর হতে পারে, আত্মমর্যাদার পদ্মাসেতু করতে পারে। সেই বাংলাদেশ কখনো তালেবানের হতে পারে না।’

অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর আবদুস সালাম হাওলাদার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ড. মো. মনিরুজ্জামান শাহীন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরের বিভাগীয় প্রধানগণ, বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিদেশ থেকে অনেকে অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে